মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম বীর প্রতীক বলেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিশ্বমঞ্চ থেকে অন্তরালে চলে গিয়েছিল। সেটিকে আমরা আবার বিশ্বমঞ্চের সব প্রেক্ষিতে সোচ্চার করার চেষ্টা করছি। রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি আন্তর্জাতিক সংকট। সুতরাং এই সংকট আন্তর্জাতিকভাবে সবাইকে নিয়ে সমাধান করতে হবে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের জুলাই বিপ্লব হলে চট্টগ্রাম ফোরাম আয়োজিত ‘চট্টগ্রামের চোখে রোহিঙ্গা সংকট : মানবতা, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসসের।
উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট একটা রাজনৈতিক ইস্যু, এটা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। অন্যভাবে এটার টেকসই সমাধান হবে না। এটার গভীরতায় যতটুকু আমরা দেখেছি, আরো বেশি জটিল এবং সংঘাত আবর্তের মধ্যে এটা আছে। সরাসরি মায়ানমার সরকার তো আছেই, আমাদের প্রতিবেশী অনেক দেশের স্বার্থ এটার সঙ্গে জড়িত। সেখানে আবার আরেকটি গোষ্ঠীও উঠে এসেছে সশস্ত্রভাবে। সেটাও সংকটের একটা বড় কারণ।
তিনি বলেন, আমরা যদি মনে করি যে, এটা রাজনৈতিক সংকট, রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থানও শক্তিশালী হতে হবে। আমরা একটা ইন্টেরিম অবস্থা অতিক্রম করছি। এর আগে আমাদের এখানে একটা সরকার ছিল, সেটার সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা কি পর্যায়ে ছিল আমরা সবাই তার ভুক্তভোগী।
ফারুক–ই–আজম বলেন, একটা বড় ধরনের গণঅভ্যুত্থান অতিক্রম করে এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে একটা ঐক্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যেটাকে নিয়ে আমরা আগামীতে একটা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি। ঐক্যবদ্ধভাবে যদি এই নির্বাচন বাংলাদেশ সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থান অনেক শক্তিশালী হবে। যেটা নিয়ে আগামী দিনে আমরা এই রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের একটা সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারব এবং আমাদের কণ্ঠ অনেক সোচ্চার হবে। বহু বিষয়ে এখানে আমরা যথার্থভাবে অবদান রাখতে পারব।
তিনি বলেন, কয়দিন আগে কমনওয়েলথ সাংবাদিকরা রোহিঙ্গা বিষয়ে কক্সবাজারে সম্মেলন করতে চেয়েছেন। আমরা সেটা সানুগ্রহ অনুমতি দিয়েছি এবং সেটা স্পন্সরও করতে আমরা রাজি আছি। চট্টগ্রামের সাংবাদিকরাও যদি এ রকম প্রোগ্রাম করতে চায়, ভিজিট করতে চায়, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়, তাহলে আমরা সেই ব্যবস্থাও করে দেব। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে পরস্পরের মাঝে কোনো কিছু লুকানোর বিষয় নেই। তথ্যের প্রবাহটা যদি থাকে তাহলে অনেক বিষয় যা আমরা জানি না, সেই তথ্যটা আমরা জেনে নিতে পারব। জানলে বস্তুনিষ্ঠ অবদানও আমরা রাখতে পারব।
তিনি বলেন, আমাদের সীমিত সম্পদ দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যাটা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেটা সৃষ্টি হচ্ছে, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরেকটি বড় ধরনের সংকট। সেটা হচ্ছে মাদক সংকট। রোহিঙ্গাদের একটা বিপুলসংখ্যক অংশ মাদকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই মাদকের অর্থনীতিটাই সীমান্তের ওপারে যে সমস্ত বাহিনীগুলো গড়ে উঠেছে তাদের আর্থিক সামর্থ্য যোগাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের সরকার এবং আইন–শৃক্সখলা বাহিনী নিবিষ্টভাবে চেষ্টা করছে, মাদকের বিষয়টি এখন বহুলাংশে বন্ধ হয়েছে বলে আমরা বলতে পারি। এটার কারণে স্থানীয়ভাবে কক্সবাজার অঞ্চলে নানা সামাজিক সংকটও সৃষ্টি হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পগুলোতে একটি মানবিক পরিবেশ সৃষ্টি করা, তাদের জন্য শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাসহ এ ধরনের বহুবিধ কাজ সরকারকে দেখতে হচ্ছে। সরকারের কর্মকর্তারা এবং আইনশৃক্সখলা বাহিনীর তিনটি ব্যাটেলিয়ন সেখানে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসানের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহীদুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ, বিএনপি নেতা ড. সারওয়ার আলম, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আহমদ হোসেন, আরাকান রোহিঙ্গা অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাঈদ আহসান খালিদ ও সাংবাদিক জিয়াদ প্রমুখ।