জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য পরিবহনে ডাকাতি, ছিনতাই ও দস্যুতাসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। অনেক সময় অপরাধীরা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে বা গাছ ফেলে বা গাড়ির গ্লাস ভেঙে যাত্রীদের জিম্মি করে নগদ টাকা ও অন্যান্য মালামাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো মহাসড়কে রাতে নৈশকোচে ডাকাতি ছাড়াও পণ্যবাহী পরিবহনের মালামাল লুট কিংবা চাঁদাবাজিও হচ্ছে। মহাসড়কে পুলিশের নিরাপত্তার মধ্যেও এসব ঘটনা ঘটছে। এমনকি অনেক বাসযাত্রী ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে।
নিরাপত্তা নিয়ে এই উৎকণ্ঠা দূর করতে এবার আন্তঃজেলা বাস-মিনিবাসে যুক্ত হচ্ছে ‘প্যানিক বাটন’।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো বাস বা মিনিবাস ডাকাতের কবলে পড়লে এই বাটনটিতে চাপ দিলেই স্বল্প সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে পুলিশ। ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা পাবেন যাত্রীরা। এর পাশাপাশি এসব অপরাধ ঠেকাতে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নতুন একটি অ্যাপস চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হচ্ছে সিসিটিভির সংখ্যাও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণপরিবহনে ডাকাতি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। এসব অপরাধীর হাত থেকে যাত্রীদের বাঁচাতে গণপরিবহনে প্যানিক বাটন বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ডিজিটাল ডিভাইস গাড়িতে বসানো হলে সহজেই ডাকাতের কবলে পড়া গাড়িগুলো শনাক্ত করতে পারবে পুলিশ। ডাকাত প্রতিরোধ করতে পারবে।
এই প্রযুক্তি ব্যবহার ও উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ডিএমপি ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে রাতে চলাচলকারী পরিবহনগুলোতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করতে চাই। আমরা সকল বাস মালিককে এ বিষয়ে উৎসাহিত করব।
তিনি বলেন, বাসের কোনো এক জায়গায় প্যানিক বাটনটি থাকবে। যার অবস্থান বাসের চালক ও তার সহযোগী জানবেন। বিপদে পড়লে তারা এই বাটনে চাপ দেবেন। এভাবে পুলিশের সহায়তা চাইবেন, যা ডাকাতরা টের পাবে না। ‘প্যানিক বাটনে’ চাপ দেওয়ার সাথে সাথে তিনটি বার্তা যাবে। তিনটি বার্তার একটি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ, দ্বিতীয় বার্তাটিতে বাসটির জিপিআরএস লোকেশনের তথ্য পাবেন সংশ্লিষ্ট থানা বা পুলিশ সুপার, তৃতীয় বার্তাটি পাবেন বাসের মালিক বা ম্যানেজার। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ বার্তাটি পাওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করে সর্বশেষ লোকেশন নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলবে। পুলিশ বাসটিকে অনুসরণ করে ডাকাতদের গ্রেপ্তার করবে।
তিনি জানান, প্যানিক বাটন সংযুক্ত করা পরিবহনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া ছাড়াও আরো কিছু সুবিধা মিলবে। রিয়েল টাইম ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সবসময় গাড়ির অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাবে। মালিক ও পুলিশ গাড়িটির রুট ট্র্যাক করতে পারবেন। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বাসটির সকল তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। গাড়িটির মাইলেজ রিপোর্ট পাওয়া যাবে। গাড়িটি ওভারস্পিড হলে চালককে সতর্ক করা যাবে।
পাশাপাশি যাত্রী সাধারণের সুবিধার্থে আরো একটি অ্যাপস চালু করতে যাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। আগামী দুই মাসের মধ্যে এ অ্যাপস চালু হবে। কোনো বাসে ডাকাতি, দস্যুতা বা অন্য কোনো অপরাধ ঘটলে যাত্রীরা তার হাতে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে কৌশলে অ্যাপসটির বাটনে টিপ দিলে এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মিজানুর রহমান জানান, অ্যাপস চালু করার কার্যক্রম চলছে। আশা করি আগামী দুই মাসের মধ্যে অ্যাপসটি চালু হবে। হাইওয়ে পুলিশ ছাড়াও এলাকাভিত্তিক থানা পুলিশ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
তিনি বলেন, অ্যাপস চালু ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে নগরীর সিটি গেট পর্যন্ত প্রায় ৪৯০টি সাইটে মোট ১৪২৭টি অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করতে হাইওয়ে পুলিশের ৩০ সদস্যের টিমকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বিদেশে পাঠিয়েও কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। দেশের সব জাতীয় মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে যানজট নিরসন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে।