ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় আনোয়ারায় প্রশাসনিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হলেও উপকূলীয় সাধারণ মানুষের মাঝে ভয় আর আতংক বিরাজ করছে। ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি ও ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখে গতকাল দিনভর উপকূলীয় রায়পুর ইউনিয়নের হাজার হাজর মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
ইউনিয়নের ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও স্থানীয়দের পাকা দালানে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের সাথে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যৌথভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকারি, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি সিপিপির এক হাজার নারী পুরুষ সদস্য উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোতে দুর্যোগ প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। তবে উপকূলীয় রায়পুর ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হলেও ইউনয়নের বাইঘ্যের ঘাট এলাকার ৮০ মিটার বাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমিন শরীফ।
গতকাল সারাদিন উপজেলার রায়পুর, বারশত, জুঁইদন্ডী, বরুমচড়া, বারখাইন ও হাইলধর ইউনিয়নে দুর্যোগ কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করেন আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক ইমন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মালেক, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল তালুকদার প্রমুখ। তাছাড়া রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ, জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস, বরুমচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল ইসলাম, বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নোয়াব আলী, চাতরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেলসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ এলাকায় দুর্যোগ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রায়পুর ইউনিয়নে বার আউলিয়া বাইঘ্যের ঘাট এলাকায় ৮০ মিটার বেড়িবাঁধ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। জোয়ারের পানি বাড়তে থাকলে যে কোনো মুহুর্তে এ এলাকাটি তলিয়ে যাবে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। এই ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জামালিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী বদরুল হক জানান, বাইঘ্যের ঘাট এলাকায় ৮০ মিটার বিধ্বস্ত বাঁধে তিনদিনের জন্য জরুরি মেরামত হিসেবে একটি টিউব ও ৮০টি জিও ব্যাগ প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরের সকল মাছ ধরার ট্রলার উপকূলে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা গবাদি পশুসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যাচ্ছে। উপজেলায় ৫৮টি সাইক্লোন শেল্টারে লোকজন আশ্রয় নিচ্ছে। স্থানীয় রায়পুর ইউনিয়নের বার আউলিয়া গ্রামের বাসিন্দা লায়লা বেগম (৭০) বলেন, ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতার কথা মনে পড়ে।
ঘর থেকে ভয়ে বটতলীর মেয়ের বাড়িতে চলে যাচ্ছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন চৌধুরী জানান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির ব্যক্তিগত সহায়তায় ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলা ও স্থানীয়দের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আনোয়ারার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পানীয় জল, শুকনো খাবার, জরুরি চিকিৎসা সামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক ইমন জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গত দুই দিন ধরে উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোতে সরেজমিনে দুর্যোগ কার্যক্রম মনিটরিং করে লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।












