আনোয়ারায় উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি সংকট

৫০৭ আবেদনের বিপরীতে সুযোগ পাচ্ছে ১১০

এম.নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | শনিবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারা সদর ও আশপাশের এলাকায় উচ্চ মাধ্যমিকে এমনিতেই স্কুল সংকট। সদরের একমাত্র স্কুলটি সরকারি ঘোষণার পর কমে গেছে আসন সংখ্যা। আগে প্রায় ৪০০ জন ভর্তির সুযোগ পেলেও সরকারি নিয়মনীতির কারণে এখন মাত্র ১১০ জন ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। এ বছর বিদ্যালয়টির ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য স্থানীয় ৫০৭ শিক্ষার্থী আবেদন করেন তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ভাগ্য লটারিতে ১১০ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়। বাকী ৩৯৭ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য ছুটতে হবে আনোয়ারা সদরের বাইরে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। এতে ভর্তি নিয়ে হতাশার ভাঁজ পড়েছে শিক্ষার্থীদের পরিবারের মাঝে। এলাকার বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ না পেয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মানষিক চাপ তৈরী হচ্ছে বলে অভিভাবকেরা জানিয়েছে।

এলাকাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারা উপজেলার ১১ ইউনিয়নের ২৪টি উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যে আনোয়ারা উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে উপস্থিত আনোয়ারা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়টি উপজেলার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৮ সালে সরকারীকরণের গেজেট হয় অনুমোদিত হলেও ২০২০ সালে সরকারি নিয়মে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। সরকারিভাবে এক শাখায় ৬০ জন করে ছাত্র ভর্তি করার নির্দেশনা থাকলেও স্থানীয় চাহিদার বিবেচনায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালকের পরামর্শক্রমে দুই সেকশনে ৮০ জন করে ১৬০ জন ভর্তি করা হয়। তাছাড়া সরকারি স্কুলগুলোতে ডে অথবা মর্নিং শিফ্‌ট অনুমোদন থাকলেও আনোয়ারায় এ পদ্ধতি চালু না থাকায় দুই শাখায় ছাত্রছাত্রী আলাদা করে ভর্তি করানো হয়। পরবর্তীতে সরকার নতুন নীতিমালা প্রবর্তনের পর থেকে লটারির মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতি শাখায় ৫৫ জন করে ছাত্র ভর্তি কার্যক্রম করার বিধান রাখা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালে ষষ্ঠ শ্রেণী হতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতি শ্রেণীতে ১১০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। অন্যদিকে নবম ও দশম শ্রেণীতে দুই শাখায় ১২০ করে শিক্ষার্থী রয়েছে। সরকারীকরণের আগে এ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে (এবিসিডি) ৪টি শাখায় ৪শ থেকে সাড়ে ৪ শত ছাত্রছাত্রী পড়ার সুযোগ পেত। বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হওয়ার পর আসন সংখ্যা কমে যাওয়ায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছে। গত ৬/৭ বছর ধরে এ বিষয়ে উপজেলার শীর্ষ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি ও পেশাজীবী মহলে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলেও গড়ে স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী গড়ে উঠেনি একটি উচ্চ বিদ্যালয়। ২০২০ সাল থেকে আনোয়ারা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় সরকারি নিয়মে ভর্তি কার্যক্রম চালুর পর এ সংকট তৈরী হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আনোারা সদরের ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ চৌধুরী জানান, আনোয়ারা সদর ইউনিয়নে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জন্য উপজেলা সদরে আনোয়ারা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও আনোয়ারা সদরের জয়কালি বাজারে একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থাকলেও। পার্শ্ববর্তী চাতরী ইউনিয়নের ডুমুরিয়া, রুদুরা, পশ্চিম কন্যারা গ্রামের বাসিন্দাদেরও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল এই দুইটি। ২০২০ সালে আনোয়ারা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় সরকারীকরণ হওয়ার পর এই বিদ্যালয় হতে প্রতিবছর ন্যূনতম এই অঞ্চলের ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ালেখার সুযোগ বঞ্চিত। এইসব শিক্ষার্থীদের আনোয়ারা সদর থেকে ৮/১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পীরখাইন আশরাফ আলী, সিংহরা রামকানাই, চাতরি উচ্চ বিদ্যালয়, শোলকাটা এসজে নিজাম, মেরিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজসহ দূর দূরান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্য হয়ে একাধিক রোড় দিয়ে নানান ভোগান্তিতে পড়ে পড়ালেখা করতে হয়। নাম প্রকাশে অনিশ্চুক উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, আমরা সরকারি চাকরির সুবাধে আনোয়ারায় কর্মরত আছি। গত বছর আমার ছেলে লটারীতে উত্তীর্ণ না হওয়ায় প্রায় উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের মেরিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ এ গত বছর ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করি। একাধিক গাড়ি পরিবর্তন করে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার পর তার মানষিক চাপ তৈরী হচ্ছে। শুধু তাই নয় স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও উপজেলা সদরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারির পাশাপাশি, ব্যাংক বীমা, বেসরকারি অফিস ও বিভিন্ন পেশাজীবী পরিবার বসবাস করে। তাদের পরিবারের ছেলে মেয়েদের উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে বিপাকে পড়েছে। পাশাপাশি স্কুল না পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশা বাড়ছে।

আনোয়ারা সরকারি মড়েল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাছির উদ্দীন জানান, কেন্দ্রীয় লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত ১১০ শিক্ষার্থীর ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির কার্যক্রম সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর মধ্যে শেষ হবে। এ বছর ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য ৫০৭ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেন তারমধ্যে লটারির মাধ্যমে ১১০ জন ছাত্র নির্বাচিত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় অনুপস্থিত ২৬১ জন
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম-১১ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা সামগ্রী অপসারণে চসিককে চিঠি