দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন ও পটিয়া–কক্সবাজার ৬ লেইনের সড়কের সাথে সংযোগ ঘটাতে আনোয়ারা থেকে চন্দনাইশ পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ বিকল্প সড়ক করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। এই প্রকল্পে বিদ্যমান সড়ক সংস্কার, প্রশস্তকরণ ছাড়াও প্রায় আড়াই কিলোমিটার নতুন বাইপাস সড়ক তৈরি করা হবে। সব মিলিয়ে খরচ হবে প্রায়ি ৪৮৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ হবে তিন বছর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন গত শনিবার উদ্বোধন করেছেন। আগামী ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেল চলাচল শুরু হবে। এদিকে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মূল সড়কটি ৬ লেইনের হচ্ছে। টানেল পার হয়ে শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে গাড়িগুলো এই পথে যাবে কক্সবাজার। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) দুর্যোগ ও আপদকালীন সড়ক হিসেবে আরেকটি বিকল্প সড়ক প্রস্তুত করবে। এই সড়কটি টানেল সংযোগ সড়কের কাছে কালাবিবিরদীঘি মোড় থেকে শোলকাটা হয়ে ছৈয়দকুচাইয়া মোড় পর্যন্ত বাইপাস হয়ে যাবে দোহাজারী রেলস্টেশনের কাছাকাছি গাছবাড়িয়া পর্যন্ত। এতে টানেল হয়ে আসা গাড়িগুলোর কক্সবাজার মূল সড়ক কিংবা দোহাজারী রেলস্টেশনে যাতায়াত নিশ্চিত হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ আজাদীকে বলেন, ৬ লেইনের মূল সড়কের সাপোর্ট হিসেবে একটি আপদকালীন সড়ক প্রস্তুত হচ্ছে। ৪৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কের দৈর্ঘ্য হবে ২১ কিলোমিটার। টানেল সড়কের কালাবিবিরদীঘি শোলকাটা ছৈয়দকুচাইয়া মোড় হয়ে সড়কটি যাবে গাছবাড়িয়া পর্যন্ত।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল ব্যবহারকারী যানবাহনসমূহ ৪৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল সংযোগ সড়ক দিয়ে শিলকবাহা ওয়াই জংশন (ক্রসিং) এসে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে মিলিত হবে। এ মহাসড়কটি জাইকার অর্থায়নে ৬ লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। এর মধ্যে ৪টি সেতু ৬ লেনে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। মহাসড়কের পাঁচ স্থানে ২.৬ কিলোমিটার ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ লেনে উন্নীতকরণের কাজ শেষ হয়েছে। ৩০ অক্টোবর এই প্রকল্প একনেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন করেন। এই প্রকল্পের বাকি ১০৬ কিলোমিটার ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। ২০৩০ সালে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তারই ধারাবাহিকতায় অন্তর্র্বর্তীকালীন সময়ে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে চাপ কমানোর জন্য গাছবাড়িয়া–আনোয়ারা জেলা সড়কটি ১৮ ফুট থেকে ৩৪ ফুটে উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ছৈয়দকুচাইয়া মোড় থেকে ২.৫ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক পিএবি সড়কে সংযুক্ত হবে। এ সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হলে বঙ্গবন্ধু টানেল হয়ে ঢাকা থেকে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এর সুফল ভোগ করবে।
সওজ সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত সড়কের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) একনেকে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ২০২৬ সালে ৩০ জুন। এই প্রকল্পের আওতায় ৩টি পিসি গার্ডার সেতু ও ১৮টি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মিত হবে। প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচ রাখা হয়েছে ১১৬ কোটি টাকা। আনোয়ারা সদরে রাস্তার প্রশস্ত কম থাকায় শোলকাটা থেকে ধানপুরা বাজার হয়ে আড়াই কিলোমিটার একটি বিকল্প সড়ক তৈরি করে এই সড়ক ছৈয়দকুচাইয়া মোড়ের সাথে যুক্ত করা হবে। শোলকাটা হয়ে বিকল্প সড়ক হলে আশপাশের বিশাল এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। সহজে টানেল থেকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মূল সড়কে যুক্ত হওয়া সম্ভব হবে।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে আনোয়ারা সদরের খাদ্যগুদাম থেকে থানার মোড়, কলেজ রোড, জয়কালী বাজার এলাকায় সড়কের প্রশস্ত কোনো কোনো স্থানে ১৮ থেকে ২০ ফুট। এতে দুটি গাড়ি ক্রস হতে যানজট হয়। জয়কালী বাজার এলাকায় প্রতিদিন যানজট হয়। নতুন নড়ক নির্মিত হলে টানেল থেকে দ্রুত চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া পর্যন্ত পৌঁছা যাবে। সেখান থেকে চাইলে রেলে করে কক্সবাজার যাওয়া যাবে। এছাড়া সড়ক পথেও যাওয়া যাবে।