আনোয়ারা-কর্ণফুলী সড়কে ফের অবরোধ ৬ ঘণ্টায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট

‘দাবি একটাই, মানুষ বাঁচাতে হাতি সরান’ । ঈদে ঘরমুখো মানুষের অবর্ণনীয় ভোগান্তি

আনোয়ারা প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৮ মার্চ, ২০২৫ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

হাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দাবি এখন বিক্ষোভে রূপ নিয়েছে। আনোয়ারাকর্ণফুলী দুই উপজেলার মানুষ হাতির তাণ্ডব বন্ধ ও হাতি সরিয়ে নেয়ার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ফের ৬ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেছে। বিক্ষুব্ধ জনতা কর্ণফুলী থানাধীন দৌলতপুরে রাস্তায় ব্যারিকেড দিলে প্রায় ৬ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। এ সময় ঈদে ঘরমুখো মানুষ ও কর্মজীবী লোকজনকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তিন কিলোমিটার সড়কজুড়ে সৃষ্ট হয় যানজট। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। অবরোধ চলাকালে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার কিশোর, যুবক এমনকি বৃদ্ধরাও রাস্তায় নেমে আসেন।

অবরোধে আসা স্থানীয় সত্তরোর্ধ্ব আবুল বশর বলেন, অতীতে কখনো দেয়াং পাহাড়ে আমরা হাতি দেখিনি, আমাদের পূর্ব পুরুষের মুখেও শুনিনি হাতির কথা। এখন হাতি এসে পায়ে পৃষ্টে আমাদের মারছে। সরকারের সব মহলে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সন্তানরা এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে হাতি সরানোর জন্য আবেদন করলেও কোনো মহল থেকে হাতি সরানোর কোনো উদ্যোগ নেই। তাই আমরা রোজা রেখে রাস্তায় নেমেছি। বনের হাতি বনে ফিরিয়ে নিয়ে মানুষের জীবন বাঁচান।

স্থানীয়রা জানান, হাতি যেন এলাকার মানুষের সামনে যমদূত হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচার কোনো উপায় চোখে দেখছে না আনোয়ারা কর্ণফুলীর দুই লাখেরও বেশি মানুষ। আতংকে বসবাস করছেন তারা।

অপর দিকে কেইপিজেড শিল্পজোনে হাতির অবাধ বিচরণের কারণে ৩৫ হাজার শ্রমিক আতংকে। কেইপিজেডের উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি এ জোনের সবুজায়ন প্রকল্প ও বিদেশি বিনিয়োগ হুমকিতে পড়েছে। সন্ধ্যা নামার আগেই বাড়ির উঠানে হাতির উপস্থিতি এলাকার মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। জনমনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।

গত শনিবার (২২ মার্চ) হাতির আক্রমণে ৩ মাস বয়সী শিশু আরমান জাওয়াদের মৃত্যু হলে ওইদিন ভোরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা আবরোধের পর ৪ দিনের সময় নেয় প্রশাসন। আজ ৪দিন পূর্ণ হওয়ায় হাতি সরানোর বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ না দেওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৬ টা থেকে আবারো আন্দোলনের ডাকদিয়ে সড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। ৬ ঘণ্টা অবরোধ শেষে স্থানীয় আন্দোলনকারী প্রতিনিধিদের সাথে সেনাবাহিনী কথা বলে ঈদের পর এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দিলে স্থানীয়রা

অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ছয়টা থেকে টানেল সংযোগ সড়কের কেইপিজেড দৌলতপুর স্কুল এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। একই সময়ে আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল সড়কের কেইপিজেডের দক্ষিণ গেইটে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। পরবর্তীতে এরাও দৌলতপুর বিক্ষোভকারীদের সাথে যোগ দিয়ে আন্দোলনে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করেন। হাতির বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী নেতা এডভোকেট নুরুল কবির।

এদিকে অবরোধের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন কেইপিজেডের শ্রমিকসহ এই রোডে চলাচল করা আনোয়ারা, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়ার যাত্রীরা।

বেলা বাড়ার সাথে সাথে সড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। বাড়তে থাকে যাত্রীদের ভোগান্তি। ঘটনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর দুটি টিম ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতেই বিক্ষোভকারীদের সাথে কয়েক দফা কথা বলে জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, কেইপিজেড, স্থানীয়দের সাথে যৌথ মিটিং আয়োজনের আশ্বাসে দুপুর ১২ টার দিকে অবরোধকারীরা অবরোধ তুলে নেন। এ সময় বনবিভাগের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নুরুল আজিম বলেন, গত ২২ মার্চ উপজেলা প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা আন্দোলন স্থগিত করি। কিন্তু তারা আমাদের আশানুরূপ কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। তাই পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আমরা আবারও আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে সড়ক অবরোধে নেমেছি। আজকের আন্দোলনে সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীলরা এসে আমাদের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনেছেন এবং আশ্বস্ত করেছেন ঈদের পর সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে স্থানীয়দের সাথে একটি যৌথ বৈঠকের আয়োজন করা হবে। পরে আমরা অবরোধ প্রত্যাহার করি।

এ বিষয়ে বন বিভাগের বাঁশখালী জলদী রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, হাতি সরানোর বিষয়ে বন বিভাগের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিবেন। আর এ বিষয়ে যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছিলো তারা হাতিগুলো সরানোর বিষয়ে কোনো সুপারিশ করেনি বরং তারা হাতিগুলো রাখার পক্ষে সুপারিশ করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধবাসে বাড়তি ভাড়া নিলে কঠোর ব্যবস্থা : সিএমপি কমিশনার