আনোয়ারায় শুষ্ক মৌসুমেও অনাবাদি হাজার একর জমি

নদী ভাঙনের প্রভাব

এম. নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | শনিবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারা উপজেলার পূর্ব বারখাইন গ্রামে শুষ্ক মৌসুমেও হাজার একরের বেশি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এসব সাঙ্গু নদীর পাড়ের এসব জমি অনাবাদি পড়ে থাকায় আগাছা জন্মে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। ভাঙ্গন ও জোয়ারের পানির কারণে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে কয়েকশ একর জমি। এছাড়া গত দুই বছর আগে স্লুইচ গেট ও বেড়িবাঁধের মাটি কাটার কাজ শেষ হলেও খাল খনন না হওয়ায় নির্মাণের পর থেকেই স্লুইচ গেটটি অকেজো পড়ে আছে। স্থানীয়রা এ অবস্থার জন্য উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন। পূর্ব বারখাইন গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজা মিয়া জানান, ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি ওঠানামার কারণে এলাকার কয়েক শত একর জমি সাঙ্গু নদীর পেটে চলে গেছে। জোয়ারের পানি উঠানামা করতে করতে এলাকার কৃষি জমি চরে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জমিগুলোতে চাষাবাদ না হওয়ায় বর্তমানে শত শত একর জমিতে আগাছা জন্মে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। কোন জমি কার সেটাও হিসেব করে বলা কঠিন। সঠিক পরিমাপ না করে বলা সম্ভব নয়।

তিনি আরো জানান, গত দুই বছর আগে বেড়িবাঁধ পরিপূর্ণ না হলেও মাটি কাটার কাজ শেষ হয়েছে। ৫ কিলোমিটারের বেশি খাল খনন করা হয়নি। নির্মাণ করা হয়েছে একটি স্লুইচ গেট। কিন্তু সাঙ্গু নদীর তীরের কয়েকশ মিটার জমিতে খাল খনন না করায় নির্মিত স্লুইচ গেট দিয়েও পানি চলাচল হচ্ছে না। ফলে এসব জমিতে কখন চাষাবাদ করা যাবে তা অনিশ্চিত। খালগুলো খনন না হওয়ায় বর্ষাকালে পুরো এলাকা থাকে জলাবদ্ধ। এলাকার হাজার হাজার মানুষের হাজার হাজার একর জমি এভাবে পড়ে আছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় দেড় কোটির চেয়ে বেশি টাকায় নির্মিত এই স্লুইচ গেট নির্মাণে ত্রুটি রয়েছে। এটি কোদলা খালের গভীরতা থেকে উঁচুতে নির্মাণ করায় পানি চলাচল হচ্ছে না। আর নির্মাণের ১ বছর যেতে না যেতেই একদিকের মাটি খালে চলে গেছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের উপসহকারী প্রকৌশলী আজমানুর রহমান বলেন, বর্তমানে কোদলা খালটির দৈর্ঘ্য ৮ কিলোমিটার। গত অর্থবছরে আমরা ২ কিলোমিটার খাল খনন করেছি। এ বছর বাকী ৬ কিলোমিটার খাল খনের জন্য প্রকল্প অনুমোদনের প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুল হক বলেন, বিগত ২২ সালে স্লুইচ গেটটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু স্লুইচ গেটের সাঙ্গু নদীর তীরের জমিগুলো স্থানীয়রা তাদের মালিকানা দাবি করার কারণে আমরা গত বছর খালটি খনন করতে পারিনি। এ ব্যাপারে স্থানীয়দের সহযোগিতা দরকার।

স্লুইচ গেটে নির্মাণে ত্রুটির বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক জানান, স্লুইচ গেটে নির্মাণ ত্রুটির অভিযোগ সত্য নয়। কারণ পানি উন্নয়ন বোর্ড এই প্রকল্প গ্রহণের আগে সাঙ্গু নদীর গভীরতা, স্থানীয় জমি, খাল সবকিছু বিবেচনা করেই বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত ও সুপারিশের প্রেক্ষিতে প্রকল্প অনুমোদন হয়ে থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় টেক্সি ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪
পরবর্তী নিবন্ধআবৃত্তি শিল্প সুন্দরের চর্চা করতে শেখায়