আনোয়ারায় রাসেলস্ ভাইপার আতঙ্ক, রূপ নিল গুজবে

কর্ণফুলী প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২১ জুন, ২০২৪ at ১০:১৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার একটি বসতঘরের ছাদে রাসেলস্ ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ পাওয়া গেছে বলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। সাপটি ধরে মেরে পুড়িয়ে ফেলেছেন বলে ভুক্তভোগী ইউসুফ সওদাগরের দাবি।

পরে সাপটির ছবি সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে ভাইরাল হয়। এমনকি বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায়ও সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা যায়।

বিষয়টি জেনে শুক্রবার (২১ জুন) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ভাইরাল হওয়া সাপের দুটি ছবি পাঠানো হয় সাপের বিষের ওপর পিএইচডি করা চিকিৎসক, টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক, ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা, মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. এমএ ফয়েজ এর কাছে।

তিনি ছবি দুটি দেখে বলেন, ‘এটি কোন রাসেলস্ ভাইপার সাপ নয়। এটি একটি সাধারণ নেকড়ে সাপ। সাধারণ সাপকে রাসেলস্ ভাইপার বলে প্রচার করা আতঙ্কের বিষয়। বরং এটি একটি সম্পূর্ণ গুজব।’

সাপের ছবি দেখে একই কথা জানালেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বাঁশখালী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বাঁশখালী ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ।

তিনি বলেন, ‘সাপটির ছবি দেখে আমি কাউকে এটি রাসেলস্ ভাইপার সাপ বলে নিশ্চিত করিনি। বরং এটি ছিলো সাধারণ সাপ। রাসেলস্ ভাইপার সাপ আরো মোটা ও বড় দাগের হয় সেটাই বলেছিলাম।’

সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনোয়ারার উপজেলা সদরে থানার পশ্চিম পাশে একটি সরু সড়কে সাপটি চলে যেতে দেখে মো. মামুন (২৫) নামের এক যুবক।

এর আগে রবিবার রাত ৮ টায় থানার পেছনে হাজী কলোনীতে ইউসুফ সাওদাগরের ভাড়া বাসার ভেতরে ছাদে সাপটি দেখে পরিবারের সদস্যরা তাকে মেরে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন।

বাড়ির মালিক আরো বলেছিলেন, রাসেলস্ ভাইপারের বিষক্রিয়ার কথা শোনে তিনি আতঙ্কে রয়েছেন। কিন্তু সাপ নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন তাঁরা বলেছেন ভিন্ন কথা।

এ বিষয়ে টক্সিকোলজি সোসাইটি অফ বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক এম এ ফয়েজ বলেন, ‘রাসেলস্ ভাইপার বা কোন সাপেই নিজ থেকে তেড়ে এসে দংশন করে না। কেবল উত্ত্যক্ত করলেই নিজ রক্ষার্থে দংশন করে। তেড়ে এসে দংশন করার প্রশ্নেই আসে না। চন্দ্রবোড়া সাপ যে সব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে কৃষিকাজে সাবধানতা অবলম্বন করুন। কর্মস্থলে সাপ আছে কিনা দেখে নিন। এরা প্রকৃতির সাথে মিশে থাকে। সম্ভব হলে পায়ে বুট পরিধান করুন। এরা দিনের বেলা খাবারের খোঁজে সচল থাকে।’

ডা. এম এ ফয়েজ আরো বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত কাউকে যদি সাপ দংশন করে। তাহলে দয়া করে গিট দেবেন না। অঙ্গটি অচল করে অতিদ্রুত উপজেলা-জেলা ও নিকটস্থ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাবেন। চিকিৎসায় বেশির ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে যান। বিনামূল্যে এন্টিভেনমসহ বিভিন্ন সামগ্রী বাংলাদেশ সরকার হাসপাতালে সরবরাহ করেছেন। কোন রাসায়নিক সামগ্রী দিয়ে সর্প দংশন কিংবা সাপকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। দয়া করে রাসেলস্ ভাইপারসহ কোন সাপ মারবেন না। এরা প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখে। মানুষের উপকার করে। আসুন রাসেলস্ ভাইপার নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হই।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধফেসবুক পোস্টে খুঁজে পাওয়া গেল আদরের সন্তানকে
পরবর্তী নিবন্ধবান্দরবানের থানচিতে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত ১