আনোয়ারায় শিক্ষকের হাতে দ্বিতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে গতকাল সোমবার থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক প্রণব কুমার ভট্টাচার্যকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
গত ১৪ মে উপজেলার চাতরি ইউনিয়নের ডুমুরিয়া রুদুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বিদ্যালয়ের জনৈক দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থীকে অনৈতিক যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনার একদিন পর গত ১৫ মে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর মা আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমানের কাছে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার ৫ দিন পরও অভিযোগের কোন ধরনের আইনী প্রতিকার না পেয়ে ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী গতকাল সোমবার সকালে বিদ্যালয়ে ঐ শিক্ষককে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এ সময় উত্তেজিত জনতা শিক্ষককে উত্তম মাধ্যম দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এই ঘটনার পর নির্যাতিতা শিশুটির মা আনোয়ারা থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ মামলা রেকর্ড করে। এলাকাবাসী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক শিশু হয়রানির শিকার হলেও উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উর্টোে ঘটনাগুলো দামাচাপা দিতে বিশেষ মহলের ভূমিকায় এলাকাবাসী ফুসে উঠেছে।
মামলারবাদী নির্যাতনের শিকার শিশু ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ, গত ১৪ মে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য
ধূমপান করে ক্লাসে প্রবেশ করে আমার মেয়ে কে মুখে ধোয়া ছেড়ে আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গা হাত দিয়ে যৌন হয়রানি করে। ঘটনার পর আমার মেয়ে বিদ্যালয়ে বমি করে। এ ঘটনায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আমার মেয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। পুরো ঘটনা আমাকে অবহিত করার পর। আমি ঘটনার পরদিন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরিচালনা পরিষদ কে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করার ৫ দিন পরও আমি কোন ধরনের বিচার পাইনি ।উল্টো ঘটনার দামচাপা দিতে নানা টালবাহানা ও সময় ক্ষেপন করতে থাকে। ঘটনাটি আমরা বুঝতে পেরে এলাকাবাসীর পরামর্শ আর সহযোগিতায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করি।
স্থানীয় ৯ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য জিয়াউল হক অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক ২য় শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর প্রতিকার না পেয়ে সোমবার সকালে বিক্ষুব্ধ অভিভাবক ও এলাকাবাসী এ ঘটনায় বিচার দাবি করে স্কুলটি ঘেরাও করে। এ সময় পুলিশ আসে অভিযুক্ত শিক্ষককে নিয়ে যায়। আমরা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। ঘটনার পর থেকে একটি বিশেষ মহল ঘটনাটি দামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, অভিযুক্ত শিক্ষক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রায় সময় ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করে থাকে। এ ব্যাপারে আমরা ম্যাডামদের জানালে স্যারেরা আমাদের প্রণব স্যার থেকে
সতর্ক থাকতে বলতেন । বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্য শামশুল আলম জানায়, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের হয়রানি করার অভিযোগের সত্যতা আমরা পেয়েছি। বিষয়টা অতি নিন্দনীয়।
ডুমুরিয়া রুদুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিতা দে বলেন, গত ১৪ মে ঘটনাটি ঘটেছে বলে শুনেছি। ঐদিন আমি বিদ্যালয়ে ছিলাম না। আমরা প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়েছি।এ ব্যাপারে আমি আমার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এবিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, এবিষয়ে আমি কিছু জানিনা আজ হঠাৎ এলাকার লোকজন এসে আমাকে মারধর করে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমাকে বললে আমি স্কুল থেকে অন্যত্র বদলি হয়ে যেতাম।
এবিষয়ে আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সোহেল আহমেদ জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আনোয়ারা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হয়েছে।