৪ বছর আগে যখন গুপ্তছড়া ঘাটে পুরাতন জেটির পাশে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি আধুনিক জেটি উদ্বোধন করা হয় যাত্রীরা আশায় বুক বেঁধেছিল এবার বুঝি বিদায় হচ্ছে তাদের চিরচেনা দুর্ভোগ। একই বছর সন্দ্বীপের কুমিরা–গুপ্তছড়া নৌরুটে আসে অত্যাধুনিক জাহাজ এমভি মালঞ্চ। বলা হয়েছিল এটি ভিড়বে জেটির সাথে। যাত্রীরা ভেবেছিল সন্দ্বীপবাসীর কাছে আতঙ্কের নাম লালবোট এড়িয়ে জেটি থেকে পায়ে হেঁটে উঠানামা করতে পারবে স্টিমারে। এ বুঝি আর উদাম হয়ে কোমর পানি আর কাদামাটি মাড়িয়ে উঠতে হবে না স্টিমার স্পিডবোট সার্ভিস বোটে।
তবে বাস্তবে ফিরতে বেশি সময় লাগেনি শত বছরের দুর্ভোগ আর ভোগান্তি নিয়ে উত্তাল সাগর পাড়ি দেয়া চট্টগ্রামের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপের বাসিন্দাদের। একদিকে পলি জমে চরের পরিধি বৃদ্ধি অন্যদিকে অপরিকল্পিতভাবে জেটি নির্মাণ প্রতিনিয়ত নৌপথ পাড়ি দেয়ার সময় ছোটখাটো একটা যুদ্ধের ধকল সইতে হচ্ছে যাত্রীদের।
৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় তোড়জোড় শুরু হয় সন্দ্বীপ নৌরুটে ফেরি চালু করার। মাত্র সাত মাসের মাথায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া থেকে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া রুটে চালু হয় ফেরি সার্ভিস। এবছর ২৪ মার্চ দ্রুতগামী ফেরি কপোতাক্ষ শুরু করে এ নৌরুটে যাত্রা। এবার শুধু যাত্রী নয় বড়বড় গাড়িও চলে আসছে ফেরি করে সন্দ্বীপে। একদিকে হেঁটেই উঠা যায় অন্যদিকে গাড়ি নিয়েও আসা যাওয়া করা সুবিধা পাওয়ায় চার লক্ষ দ্বীপবাসী যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। নারী শিশু ও বয়স্ক যাত্রীদের পছন্দের বাহন হয়ে উঠেছিল ফেরি কপোতাক্ষ।
কিন্তু সন্দ্বীপবাসীর এ মধুচন্দ্রিমা দুই মাসের মাথায় ফ্যাকাশে হতে শুরু করে। নাব্যতার অভাবে ফেরি চলাচলে বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়। সাথে সাথে ফেরির পন্টুন থেকে স্পিডবোট স্টিমার চলাচল ব্যাহত হয়। ফেরি চালু হওয়ার পর গুপ্তছড়া ব্রিজ ছেড়ে যাত্রীরা ফেরির পন্টুন দিয়ে স্টিমার ও স্পিডবোটে যাতায়াত করতো। কারণ সরাসরি পন্টুন গোড়ায় গাড়ি নিয়ে এসে গাড়ি থেকে নেমেই কাদামাটি ও কোমর পানি এড়িয়ে পায়ে হেঁটেই তারা নৌযানে উঠানামা করতে পারতো। কিন্তু পলি জমে খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পূর্ণ জোয়ার ছাড়া এ পন্টুন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায়। ফলে সন্দ্বীপের কূলে আবার ফিরে যেতে হয় গুপ্তছড়া জেটিতে। এখানে সিএনজি ও কার থেকে জেটির মাথায় আসতে হলে মালামাল নিয়ে উঠতে হয় ভ্যান গাড়িতে। তারপর ভাটার সময় প্রায় ৫০০ মিটারের কাদামাটি ও কোমর পানি মাড়িয়ে উঠতে হয় নৌযানে। প্রায় সময় যাত্রীদের কোমর পর্যন্ত ডুবে যায় কাদায়।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল ৭টায় বাঁশবাড়িয়া থেকে ছেড়ে আসা ফেরিটি গুপ্তছড়া খালের মুখে চরে আটকে যায়। ফেরি মাস্টার শামসুল ইসলাম সাইফুল জানান, ফেরিতে থাকা যাত্রীরা লালবোটে করে কূলে নেমে যায়। সন্ধ্যার জোয়ারে ফেরি গুপ্তছড়া পন্টুনে ভিড়লে ট্রাক বাস নামবে। মঙ্গলবার সকাল ১০টার সময় গুপ্তছড়া ঘাটে দেখা যায়, চট্টগ্রামের কুমিরা থেকে ছেড়ে আসা স্পিডবোট গুলো থেকে যাত্রীরা কোমর পানিতে নামছে। এরপর প্রায় ৫০০ মিটার কাদামাটি মাড়িয়ে তারা গুপ্তছড়া ব্রিজে উঠছেন। এ দৃশ্য নিত্যদিনের।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন আজাদীকে জানান, ব্রিজের পরিধি পর্যায়ক্রমে এক কিলোমিটার বাড়াতে হবে। আপাতত ৫০০ মিটার বাড়িয়ে হলেও এ দুর্ভোগ থেকে যাত্রীদের মুক্ত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সাময়িক ব্যবস্থা হিসাবে লোহার ফুট ব্রিজ করে হলেও কাদামাটি ও কোমর পানি থেকে বৃদ্ধ নারী শিশুদের ভোগান্তি থেকে বাচার ব্যবস্থা করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সদস্য এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আজাদীকে জানান, বিভিন্ন সময় কাঠের ব্রিজ, ভাসমান বিভিন্ন ব্রিজ করা হলেও স্রোতের তীব্রতায় টিকেনি। তিনি বলেন, গত পরশু এই জায়গায় একটা স্থিতিশীল ব্রিজ করার ব্যাপারে সন্দ্বীপের ইউএনওর সাথে এনসিপির নেতৃবৃন্দ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বিআইডাব্লিউটিএর সাথে কথা বলে সকল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে এ ভোগান্তি দূর করার জন্য সন্দ্বীপবাসীর টাকা দিয়ে হলেও একটা স্থিতিশীল ব্রিজ করে দেয়ার উদ্যোগ যেন দ্রুত নেয়া হয়।
সন্দ্বীপ নৌরুটে যাত্রীদের দুর্ভোগ নিয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটির নির্বাহী প্রকৌশলী এএসএম আশরাফুজ্জামান আজাদীকে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি সন্দ্বীপবাসীকে ভালো সেবা দিয়ে যাওয়ার জন্য। তবে প্রকৃতির উপর কারোই হাত নেই। এখানে পলি জমে চরের পরিধি বৃদ্ধি হওয়ার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি জানান, বাঁশবাড়িয়া ঘাটে ড্রেজিং শুরু হয়েছে। সেটি কয়েকদিনের মধ্যে গুপ্তছড়া ঘাটেও ড্রেজিং করবে। গুপ্তছড়া ব্রিজের মাথায় কাদামাটি ও কোমর পানি মাড়িয়ে যাত্রীদের উঠানামার জন্য লোহার ফুট ব্রিজ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটিও টেকসই হবে না। কয়েকদিনের মধ্যে পলি জমে এই ফুট ব্রিজকে অকার্যকর করে ফেলবে। তবুও কিছু করা যায় কিনা এ বিষয়ে তিনি বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।