বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ শিল্পী আমিনুল ইসলাম। নিরীক্ষাধর্মী, বহুবৈশিষ্ট্যমণ্ডিত নতুন নতুন উদ্ভাবনী কৌশল দিয়ে চিত্রশিল্পে নবীন মাত্রার সঞ্চার করেছিলেন এই শিল্পী। আজ তাঁর ৮৭তম জন্মবার্ষিকী।
শিল্পী আমিনুল ইসলামের জন্ম ১৯৩১ সালের ৭ নভেম্বর। চিত্রকলায় তাঁর সৃজনশীলতা আর অসাধারণ মেধার স্বাক্ষর মেলে বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে। কেবল আঁকিয়ে নয়, প্রগতিশীল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর বিশ্বাস ছিল, সুস্থ সংস্কৃতিই পারে সমাজের-রাষ্ট্রের পরিবর্তন ঘটাতে। স্বদেশপ্রীতি, সামাজিক দায়বদ্ধতা আর অঙ্গীকারের চেতনা তাঁর শিল্পীসত্তা আর মানসযাত্রায় প্রভাব ফেলেছিল। আমিনুল লেখাপড়া করেছেন আর্ট স্কুলে। ইতালি সরকারের বৃত্তি নিয়ে ফ্লোরেন্সে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি প্রধানত তেল ও জলরং এবং মোজাইক, ম্যুরাল, কোলাজ ও অন্যান্য মাধ্যমে কাজ করেছেন। হৃদয়ে সদাই প্রবহমান ছিল দেশীয় ভাবধারা আর এরই সাথে মিলিয়ে তাঁর সৃষ্টিতে পাশ্চাত্যের আধুনিকতার প্রভাব লক্ষ করা যায়। তাঁর আঁকা বিভিন্ন ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘কিউ’, ‘বর্ষা’, ‘জেলের স্বপ্ন’, ‘দুটি মুখ’, ‘শিকার’, ‘ফ্লোরেন্স’, ‘নারী ও কবুতর’, ‘নবান্ন’, ‘দুর্গা ও শিব’, ‘ইন বন্ডেজ’, ‘পাখি নিয়ে মেয়ের খেলা’ ইত্যাদি। ১৯৫৬ সালে আমিনুল চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। দীর্ঘ ত্রিশ বছর তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে অনেকটা নিভৃতচারী আমিনুল মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, শিল্পের কোনো বেড়াজাল নেই। শিল্পকে তিনি বরাবরই দেখেছেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের বেড়াজালের ঊর্ধ্বে। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১১ সালের ৮ জুলাই শিল্পী প্রয়াত হন।