সাগরিকা পশুর হাটের পশ্চিম পাশে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছে। গতকাল টাইগারপাসে নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর উপস্থিতিতে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এবং প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুর রহিম এমওইউতে স্বাক্ষর করেন।
এ সময় মেয়র বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর জানতে পারি বিভিন্ন জটিলতায় এই প্রকল্পের বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে সমস্যাগুলো নিরসন করায় এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখছে।
তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে আধুনিক এই কসাইখানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে নগরের যেখানে–সেখানে পশু জবাই বন্ধ হবে। এতে পরিবেশ দূষণ কমে আসবে। রোগবালাই আছে এমন গরু জবাই করা বন্ধ হবে। বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রক্রিয়াকৃত মাংস খেতে পারবে চট্টগ্রামবাসী। এ সময় উপস্থিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার চান। আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সচেতন জনগণ এই কসাইখানা থেকে জবাই করা পশুর মাংস খেতে চাইবেন। কারণ, এ কসাইখানায় সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মাংস প্রক্রিয়া করা হবে। রোগ–জীবাণু ও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাবে এ কসাইখানা। এছাড়া এখানে জবাই করা পশুর চামড়াও থাকবে নিখুঁত।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর মোবারক আলী, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, আইন কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহীন উল ইসলাম।
জানা গেছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গৃহীত ৪ হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন’ (দি লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট–এলডিডিপি) শীর্ষক প্রকল্প ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পশু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের জন্য চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় তিনটি সেমি অটো এবং ২০টি জেলায় একটি করে আধুনিক পশু জবাইখানা নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব কসাইখানার জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৭৩৩ কোটি। এর মধ্যে চট্টগ্রামসহ দেশের তিনটি সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রতিটি কসাইখানার জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৮৩ কোটি টাকা। তবে গতকাল এমওইউ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কসাইখানাটি নির্মাণে ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকা।
এমওইউ অনুযায়ী, কসাইখানা নির্মাণে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে ১০০ শতক জমি দেবে চসিক। নির্মাণ শেষে এটি চসিককে হস্তান্তর করা হবে।
চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ জানান, নির্মাণ শেষে কসাইখানাটিতে দুটি পৃথক লাইনে একসঙ্গে প্রতি ঘণ্টায় ২৫টি গরু–মহিষ এবং ৬০টি ছাগল জবাই ও প্রক্রিয়াজাত করা যাবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ হালালভাবে পশু জবাই হবে এ স্মার্ট কসাইখানায়। এখানে জবাই করা পশুর মাংসে রক্ত–পানি জমে থাকবে না। তাই ক্রেতারা মাংস কিনে লাভবান হবেন।