শিক্ষার মান উন্নত করার লক্ষ্যে গত বছরের এপ্রিল মাসে দুই দফায় চট্টগ্রামের ৯টি সরকারি কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) অধিভুক্ত করার নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নির্দেশনার ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চবির অধিভুক্ত হওয়ার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এছাড়া শিক্ষক স্বল্পতা, অবকাঠামো দিক বিবেচনা করে এ অধিভুক্তির সিদ্ধান্ত কল্যাণ বয়ে আনবে কিনা সেটা নিয়ে নেতিবাচক মতামত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত এপ্রিলে অধিভুক্তির নির্দেশনা পেয়ে তৎকালীন চবি উপাচার্য প্রফেসর আবু তাহের কলেজগুলোর অধ্যক্ষের সাথে একটি সভা করেন। সেখানে কলেজগুলোর বিভিন্ন তথ্য নেয় চবি কর্তৃপক্ষ। পরে এ ব্যাপারে কলেজগুলোকে নির্দেশনা জানানোর কথা থাকলেও কিছুই জানানো হয়নি। এটা নিয়ে আর কোনো আলোচনাও হয়নি। এরপর প্রশাসন পরিবর্তন হয়ে যায়। এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে বর্তমান প্রশাসন জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়কে একটা পর্যালোচনা পাঠানো হয়েছে, কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে; এর আলোকে মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা দিবে সেই অনুযায়ী কাজ হবে।
এদিকে ৯টি কলেজ এখনো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হচ্ছে পরীক্ষা। বর্তমানে কলেজগুলো চবির আওতাভুক্ত হবে কিনা, তা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন ৯ কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশনা না পেয়ে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারছে না চবি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়টি নিয়ে চবি কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে। অধিভুক্ত কলেজ বিষয়ক যে সমস্যা ঢাবিতে দেখা যাচ্ছে সেটার পর মন্ত্রণালয়ের হয়ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। আর অধিভুক্তের সিদ্ধান্ত থাকলেও সেটা কোন প্রক্রিয়ায় হবে সেটিও জানানো হবে।
জানা যায়, অধিভুক্তির নির্দেশনার পর কলেজগুলোর অধ্যক্ষের সাথে একটি সভা করা হয়। এরমধ্যে কোটা আন্দোলন, কারফিউ, শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিতে অধিভুক্তির বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। নতুন উপাচার্য প্রফেসর ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন প্রশাসনিক কাঠামো ঢেলে সাজিয়েছেন। তবে এখনও ৯ কলেজকে অধিভুক্ত করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি।
এদিকে ঢাবির মতো পরিস্থিতি চট্টগ্রামেও সৃষ্টি হবে কিনা– তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত বছরের ২২ এপ্রিল চট্টগ্রামের চারটি কলেজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো, সরকারি সিটি কলেজ, গাছবাড়ীয়া সরকারি কলেজ (চন্দনাইশ), চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ ও পটিয়া সরকারি কলেজ। এর আগে ৪ এপ্রিল আরও পাঁচটি কলেজ চবির অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, হাজী মুহম্মদ মহসিন সরকারি কলেজ, স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ (বোয়ালখালী), সরকারি কমার্স কলেজ ও সাতকানিয়া সরকারি কলেজ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ–সচিব রোখছানা বেগমের স্বাক্ষরিত পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নয়টি কলেজকে চবির অধিভুক্ত করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা ও অনুশাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উল্লিখিত নয়টি কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার জন্য এ বিভাগ হতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ছাড়া ৯ কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পক্ষে নন অধিকাংশ শিক্ষার্থী–শিক্ষকরা। নয় কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, অধিভুক্ত মানে কলেজের সব কিছু চবির অধীনে চলে যাওয়া। সকল সার্টিফিকেট মার্কশিট চবি থেকে তুলতে হবে। এখন সেই সক্ষমতা চবির আছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে আমাদের। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ হাজার। এর বাইরে পরিকল্পনা ছাড়া ৯ কলেজের শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিলে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে প্রতিষ্ঠানটিতে। পর্যাপ্ত জনবল ও সুযোগ–সুবিধার অভাবে নিজস্ব শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পরীক্ষা নেওয়া ও ফল তৈরিতে বিলম্বের কারণে বেশ কয়েকটি বিভাগে রয়েছে সেশনজট। নিজ শিক্ষার্থীদের বাইরে ৯ কলেজের শিক্ষার্থীর যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়া, ফল তৈরি করা, নতুন বর্ষে ভর্তি হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য নিজেদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে কিনা– তা চবি কর্তৃপক্ষকে ভেবে দেখতে হবে।
এ ব্যাপারে এখনো চবি কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি বলে জানান মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মাদ কামরুল ইসলাম। তিনি আজাদীকে বলেন, অধিভুক্ত করার প্রজ্ঞাপনের পর বিষয়টি নিয়ে গত বছরের এপ্রিলে চবি কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের সভা হয়। সেখানে বিভিন্ন আলোচনা হয়। আমাদের থেকে তথ্য চাওয়া হয়। এরমধ্যে নতুন সেশন থেকে চবির অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সেটা চূড়ান্ত কিছু ছিল না। পরে চবি থেকে আমাদের জানাবে বলেছিল। কিন্তু আর কোনো আপডেট আমরা পাইনি। এখন আমরা কী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাবো, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আমাদের প্রশ্ন করেন, কিন্তু সঠিকভাবে বলতে পারি না। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আমরা আগের মতোই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অনুসারে ক্লাস–পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছি। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া ৯ কলেজকে চবির অধিভুক্ত করলে পরে জটিলতা তৈরি হবে।
এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে জানিয়ে চবি কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. আমির মোহাম্মদ নসরুল্লাহ আজাদীকে বলেন, অধিভুক্তির ঘোষণার পর মন্ত্রণালয় থেকে একটি মতামত পাঠাতে বলা হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেটি পাঠানো হয়েছে। সেখানে কিছু শর্ত রয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় থেকে যেটা জানানো হবে আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করবো। মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি আমরা।