পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে সাতজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে একজন জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাকে বাদ দিয়েই গতকাল মঙ্গলবার বাকি ছয়জনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন ঢাকা মহানগর হাকিম তাহমিনা হক। সংশ্লিষ্ট আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এস আই আলমগীর হোসেন জানান, যে সাতজনের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়ার কথা ছিল তাদের মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমানে ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল শেষ মুহূর্তে এসে অস্বীকৃতি জানান। খবর বিডিনিউজের।
জবানবন্দি দেওয়া অন্যরা হলেন পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী, ডেসপ্যাচ রাইডার খলিলুর রহমান, অফিস সহকারী সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন ও তার ভাই সায়েম হোসেন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লিটন সরকার। গতকাল দুপুরে গ্রেপ্তার ১৭জনকে আদালতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে সাতজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে সম্মত হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন শাখার অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা তাদের জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন। পরে তাদের মহানগর হাকিম তাহমিনা হকের খাস কামরায় নেওয়া হয়। বাকি দশজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন মহানগর হাকিম তাহমিনা হক।
এই দশজন হলেন পিএসসির দুই উপপরিচালক আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিকেল টেকনিশিয়ান নিয়ামুন হাসান, সাবেক সেনা সদস্য নোমান সিদ্দিকী ও জাহিদুল ইসলাম এবং আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম।
পিএসসির ৫ কর্মকর্তা–কর্মচারী বরখাস্ত : এদিকে বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার পাঁচ কর্মকর্তা–কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে সরকারি কর্ম কমিশন–পিএসসি। এরা হলেন পিএসসির দুই উপপরিচালক আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, ডেসপ্যাচ রাইডার খলিলুর রহমান ও অফিস সহকারী সাজেদুল ইসলাম। গতকাল পৃথক পাঁচটি প্রজ্ঞাপনে তাদের বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, গত ৫ জুলাই বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ–সহকারী প্রকৌশলী পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিতরণের সঙ্গে ‘জড়িত থাকা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী কর্তৃক অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করার’ অভিযোগে পাঁচ কর্মকর্তা–কর্মচারী গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছেন। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮–এর ৩৯(২) ধারা অনুযায়ী তাদের চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পিএসসি।
এদিকে বাংলানিউজ জানায়, গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী, পিএসসির ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইউ) একজন দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
প্রায় এক যুগ থেকে পিএসসির অধীনে বিসিএসসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে একটি চক্র জড়িত বলে গত রোববার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। সেখান এই চক্রের ছয়জনের ছবি প্রকাশ করা হয়। এরপর গত কয়েক দিনে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ–সিআইডি। পরে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করা হয়। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পিএসসির পক্ষ থেকেও তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।