আদালতে সাপের উপদ্রব

চার দিনের ব্যবধানে দুটি আদালতে মিলল সাপ, আতঙ্ক । দরজা খুলে রুমে ঢোকা মাত্র গায়ের উপর পড়ল সাপ

হাবীবুর রহমান | সোমবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে গতকাল রোববার সকালে দরজার তালা খুলে ট্রাইব্যুনালটির ভেতর প্রবেশ করেন বেঞ্চ সহকারী বরাত চৌধুরী। হঠাৎ তিনি নিজের শরীরে একটি সাপ আবিষ্কার করেন। দরজার উপর থেকে পড়া সাপটি আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ছিল এবং কামড় দিয়েই দিচ্ছিল। তবে এর আগেই বরাত চৌধুরী কোনোরকমে সাপটিকে নিজের শরীর থেকে ছাড়াতে সক্ষম হন।

শুধু গতকাল নয়। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত৩ এর ভেতরেও একটি সাপ পাওয়া গেছে। চার দিনের ব্যবধানে দুটি আদালতে সাপ পাওয়ার ঘটনায় আইনজীবী, আদালতের কর্মকর্তাকর্মচারী, এমনকি বিচারপ্রার্থীদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, সম্প্রতি আদালত, আদালত পাড়া এলাকায় সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত৩ এবং গতকাল চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের ভেতরে সাপ পাওয়া গেছে। পরে আদালত সংশ্লিষ্টরা সাপ দুটি মেরে ফেলেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আদালত এলাকার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ঝোপঝাড়, ময়লাআবর্জনাসহ নানা কারণে ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। ইঁদুর খুঁজতেই সাপ ঢুকে পড়ছে আদালত চত্বরে। এমনকি আদালতের ভেতরেও। শুধু আদালতের ভেতর নয়, আশপাশের দোকানপাট ও চায়ের স্টলেও সম্প্রতি একই ধরনের সাপ দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন দোকানদাররা।

আদালতপাড়ার এক চায়ের দোকানদার বলেন, কয়েকদিন আগে আমার দোকানের পেছনে সাপ ঢুকেছিল। পরে সবাই মিলে তাড়িয়ে দিয়েছি।

আইনজীবীরা বলছেন, আদালতের মতো নিরাপত্তাসংবেদনশীল এলাকায় বারবার সাপ ধরা পড়া প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার প্রমাণ।

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির এক সদস্য বলেন, আদালতপাড়া জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে সাপ পাওয়া অস্বাভাবিক ও ঝুঁকিপূর্ণ। অবিলম্বে পরিচ্ছন্নতা ও ইঁদুর দমন কার্যক্রম বাড়াতে হবে।

সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে আদালত চত্বর ক্রমে ‘সাপের রাজ্যে’ পরিণত হতে পারে।

চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত৩ এর বেঞ্চ সহকারী তারিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আদালতের স্টেনোগ্রাফার যে রুমটিতে বসেন সেখানে বৃহস্পতিবার একটি সাপ পাওয়া গেছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্টেনোগ্রাফার প্রথমে সাপটি দেখেন। এরপর আমাকে জানালে আমি সেখানে যাই। পরে সাপটিকে মেরে ফেলি। সাপটি কারো ক্ষতি করতে পারেনি। এটি বাচ্চা সাপ ছিল। আমরা আতংকে রয়েছি। আমাদের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট স্যারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনিও এসে সাপটিকে দেখেছেন।

বেঞ্চ সহকারী বলেন, স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের আদালত কক্ষের পুরোটা পরিষ্কার করা হয়েছে। সাড়ে ৭ হাজার মামলার সব ফাইল দেখা হয়েছে। আদালত কক্ষে আর কোনো সাপ আছে কিনা তা দেখতেই এ কাজ করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী বরাত চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আমি দরজা খুলে ট্রাইব্যুনালে ঢোকা মাত্র গায়ের উপর একটি সাপ দেখতে পাই। সাপটি দরজার উপর থেকে আমার গায়ে পড়ে। আমার হাতে কামড় দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ফুল হাতা শার্ট থাকায় বেঁচে গেছি। দ্রুত সাপটিকে নিচে ফেলে দিই। আমার কয়েকজন সহকর্মী এগিয়ে আসে। আমরা সাপটিকে মেরে ফেলি। তিনি বলেন, ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আল্লাহ রক্ষা করেছে। সাপটি বিষধর কিনা জানি না।

উল্লেখ্য, ধরা পড়া সাপ দুটি দেখতে ধামন সাপের মতো। এটি বিষহীন মনে করা হচ্ছে। সাধারণত ধূসর, বাদামি বা হালকা সবুজ রঙের হয় এ ধরনের সাপ। একটু লম্বাটে ও চটপটে স্বভাবের। ইঁদুর, ব্যাঙ, ছোট পাখি খায়। গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি নগরেও এই সাপ দেখা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেষ দিনে ৪৯ জনের মনোনয়নপত্র জমা
পরবর্তী নিবন্ধচবির কর্মকর্তাকে শোকজ, জামায়াতের পদ থেকেও অব্যাহতি