আদালতে জাবেদের দুই কর্মচারীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে জাবেদের সম্পদ রয়েছে, ভুয়া কোম্পানি সৃষ্টি করে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

সাবেকমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী দুই কর্মচারী উৎপল পাল ও আব্দুল আজিজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে দুই কর্মচারী বলেছেন, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে জাবেদের সম্পদ রয়েছে। অস্তিত্ব নেই অথচ অস্তিত্ব রয়েছে দেখিয়ে, ভুয়া কোম্পানি সৃষ্টি করে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন জাবেদ।

গত রোববার কর্ণফুলীর শিকলবাহা এলাকা থেকে জাবেদের স্ত্রী রুকমিলা জামানের ড্রাইভারের বাসা থেকে ২৩ বস্তা নথি উদ্ধারের বিষয়েও তথ্য দেন দুই কর্মচারী। তারা জানান, নথিগুলো বিদেশ থেকে মেইলে পাঠানো হয়েছিল। এরপর প্রিন্ট করে নগরীতে থাকা জাবেদের অফিসের টেবিলের পাশে রাখা হয়। পরবর্তীতে নথিগুলো রুকমিলার ড্রাইভার ইলিয়াস অন্যত্র সরিয়ে নেন। গতকাল ৫ দিনের রিমান্ড শেষে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদের আদালতে হাজির করা হলে উৎপল পাল ও আব্দুল আজিজ ১৬৪ ধারায় এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

দুদক পিপি মোকাররম হোসেন আজাদীকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, পরবর্তীতে উৎপল পাল ও আব্দুল আজিজকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আদালত সূত্র জানায়, ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে গত ২৪ জুলাই জাবেদসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলায় গত মঙ্গলবার জাবেদের ব্যক্তিগত দুই কর্মচারী উৎপল ও আব্দুল আজিজকে গ্রেপ্তার করে দুদক। এরপর আদালতে উপস্থাপন করে তাদের সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়। আদালত তখন তাদের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। এরই ধারাবাহিকতায় দুদক তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে নানা তথ্য বেরিয়ে আসে। সেসব তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার ভোরে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা এলাকায় থাকা জাবেদের স্ত্রী রুকমিলা জামানের গাড়ির চালক ইলিয়াসের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে দুদক। অভিযানে নানা তথ্য সম্বলিত ২৩ বস্তা নথি জব্দ করা হয়। এসব নথি থেকে নতুন করে ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জাবেদের সম্পদের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন অভিযান পরিচালনাকারী দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মশিউর রহমান।

আদালত সূত্র আরো জানায়, এ মামলায় গত রোববার জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুর রহমান। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) পোর্ট শাখা থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের উক্ত মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ চেয়ে গত বৃহস্পতিবার দুদকের পক্ষ থেকে করা আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক এ নির্দেশ দিয়েছিলেন। দুদক সূত্র জানায়, ইউসিবিএল থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে গত ২৪ জুলাই সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে করা মামলাটির বাদী দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মশিউর রহমান। মামলাটিতে ব্যাংকের পরিচালক আসিফুজ্জামান চৌধুরী, বোন রোকসানা জামান চৌধুরী ছাড়াও ইউসিবিএল ব্যাংক ও আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তারা রয়েছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, জাবেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে নামসর্বস্ব ভিশন ট্রেডিং নামে একটি কোম্পানির কাগজ তৈরি করে গম, মটর, হলুদ, ছোলা আমদানির নামে ২৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয় ইউসিবিএল ব্যাংক চট্টগ্রামের পোর্ট শাখা থেকে। সেই টাকা আরামিট গ্রুপের কর্মচারীদের নামে তৈরি করা আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামে আলাদা চারটি কোম্পানির ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করা হয়। পরে ওই টাকা পাচার করা হয়।

দুদক সূত্র আরো জানায়, গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানে তার ও তার স্ত্রীর নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি স্থাবর সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে; যা ইতোমধ্যে আদালত কর্তৃক জব্দের আদেশ হয়েছে। এছাড়া ৫ মার্চ তাদের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশসহ গত বছরের ৭ অক্টোবর এ দম্পত্তির বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ ১৯ প্রার্থী
পরবর্তী নিবন্ধজাবেদ, তার স্ত্রীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আরও দুই মামলা