আদালতে জবানবন্দিতে যা বললেন ভোলা

ভারতে পালাতে গিয়ে ফের গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৮:০২ পূর্বাহ্ণ

ভারতে পালানোর সময় চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এহতেশামুল হক ভোলাকে (৪১) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা বেনাপোল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফি উদ্দিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আসামি ভোলা। বাকলিয়া থানাধীন রাজাখালী এলাকার মৃত সিরাজুল হকের ছেলে ভোলা মিতু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি সরবরাহ করেছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। গত ১৫ সেপ্টেম্বর মহামান্য হাইকোর্ট মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার আসামি এহতেশামুল হক ভোলার চার সপ্তাহের জামিন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে হাইকোর্ট জামিনের মেয়াদ শেষে আসামিকে বিচারিক (নিম্ন) আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১১ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে আসামি ভোলা আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। এ সময় আদালত মামলার মূল নথি তলব করে পরবর্তী ধার্য তারিখে শুনানির জন্য রেখে দেন। পরে আদালত আসামি ভোলার অনুপস্থিতিতে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা আজাদীকে বলেন, ভারতে পালানোর সময় যশোরের বেনাপোল থেকে বৃহস্পতিবার রাতে ভোলাকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়েছে। শনিবার দুপুরে তাকে মিতু হত্যা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। মহানগর হাকিম শফিউদ্দিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে যা যা জানে তা বলেছে। কিন্তু ভোলা কী বলেছেন তা বিশদ জানাতে অস্বীকৃতি জানান তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা।
তবে আদালতের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি ভোলা হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে সে জানিয়েছে, বাবুল আক্তারই তার স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা। জবানবন্দিতে ভোলা জানান, রাজাখালী এলাকায় তার বালু, মুরগির খাবার, চালকল, চা পাতাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে। মিতু হত্যাকাণ্ডের অপর আসামি মুসার মাধ্যমে বাবুল আক্তারের সাথে তার পরিচয় হয় ২০০৮ সালে। মুসা আগে থেকেই বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে কাজ করতো। পরিচয় হওয়ার পর ডবলমুরিং এলাকায় একটি ঘটনার বিষয়ে বাবুল আক্তারকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করেন ভোলা। তার তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে বাবুল আক্তার অস্ত্রসহ আসামি গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। বাবুল আক্তারের নির্দেশে নিজের ফার্মে মুসাকে চাকরি দেন ভোলা। একদিন মুসা তাকে বলে, বাবুল আক্তারের সাথে তার স্ত্রী মিতুর ঝগড়া চলছে। বাবুল আক্তার তার স্ত্রীকে মেরে ফেলার জন্য মুসার সাহায্য চেয়েছেন। ভোলা মুসাকে নিষেধ করে বাবুল আক্তারের দাম্পত্য কলহে নিজেকে না জড়াতে। এ কথাটি মুসা বাবুল আক্তারকে জানিয়ে দেয়। কয়েক দিন পর বাবুল আক্তার মুসার মাধ্যমে তাকে ডেকে পাঠান। জিইসির মোড়ে বাবুল আক্তার তাকে বলেন যে, মুসাকে একটা দায়িত্ব দিয়েছি। পারলে সাহায্য করবে, কিন্তু বাধা দিলে পরিণতি খারাপ হবে। সেখান থেকে চলে আসে ভোলা। পরে মুসাকে অনুরোধ করে এ ঘটনায় তাকে না জড়াতে। মুসা জানায় ঘটনার জন্য একটি ‘মেশিন’ কিনতে হবে। এজন্য বাবুল আক্তার টাকাও দিয়েছেন। তখন ভোলা মনিরের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেয় মুসাকে। মনির মুসার অধীনে দারোয়ানের চাকরি করতো। ঘটনার দিন অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে মুসা তাকে ২/৩ বার ফোন করে। ভোলা ফোন রিসিভ করে কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। সকাল এগারটার দিকে তিনি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, খাতুনগঞ্জ শাখায় একটি চেক পাশ করতে গেলে টিভির হেডলাইনে বাবুল আক্তারের স্ত্রী খুনের বিষয়টি জানতে পারেন। ভোলা মুসাকে ফোন করে। কিন্তু ফোন বন্ধ পান। পরে মুসা অফিসে এলে তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। মুসা জানান, কাজটা না করে তার উপায় ছিল না। কারণ বাবুল আক্তার তাকে কাজটা না করলে ক্রসফায়ার দেবেন বলে শাসিয়েছেন। তাছাড়া কাজটা করার জন্য টাকাও দিয়েছেন। মুসা তাকে একটা কাপড়ের ব্যাগ দিয়ে মনিরকে দিয়ে দিতে বলে চলে যায়। কাপড়ের ব্যাগটি মনিরকে দিয়ে দেয় ভোলা। পরে ডিবি পুলিশ তাকে মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক করে ঐ ব্যাগের বিষয়ে জানতে চায়। ভোলা তখন মনিরের কাছে নিয়ে যান পুলিশ টিমকে। পুলিশ মনিরকে আটক করে ও ব্যাগটি উদ্ধার করে এবং ব্যাগ খুলে অস্ত্র পায়। পরে জানতে পারে, এই অস্ত্র দিয়ে মুসা ও তার সহযোগীরা মিতুকে হত্যা করেছে। জেল থেকে জামিনে এসে ভোলা মুসার খোঁজ করে না পেয়ে তার সী্ত্র পান্না আক্তারের সাথে যোগাযোগ করেন। পান্না তাকে জানায়, মুসা অনেকদিন ধরে নিখোঁজ, বাবুল আক্তার তার স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের পর মুসাকে ফোন করেছিল। মুসা বাড়ির বাইরে থাকায় সে ফোন ধরে। তখন বাবুল আক্তার মুসার খোঁজ করে এবং মুসাকে সাবধানে থাকতে বলে। পরে বাবুল আক্তার আবার ফোন করলে মুসা নিজেই ফোন ধরে এবং বাবুল আক্তারকে জানিয়ে দেয় যে, তার বা তার পরিবারের যদি ক্ষতি হয়, তবে সে পুলিশের কাছে মুখ খুলতে বাধ্য হবে। এরপর থেকেই মুসা নিখোঁজ হয়ে যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটাইগারদের লঙ্কা মিশন আজ
পরবর্তী নিবন্ধদুই মিনিটেই শেষ কিলিং মিশন