আদর্শ শিক্ষায় ডিজিটাল বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ

এস এম জাওয়াদ | শুক্রবার , ৭ জানুয়ারি, ২০২২ at ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ

আজকের শিশুকে আগামী দিনের আদর্শ নাগরিকরুপে গড়ে তুলতে একটি আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই। সুসমন্বিত ও কল্যাণধর্মী জীবনযাপনে সচেতন, কর্তব্যবোধে উদ্বুদ্ধ সৎ ও প্রগতিশীল দৃষ্টিসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ার লক্ষ্যে ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত চকবাজার চট্টেশ্বরী রোডে অবস্থিত ‘চট্রগ্রাম ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ’ বন্দর নগরীর বুকে এমনই একটি মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত ‘রিসার্চ ফর এডুকেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাডেমী ট্রাস্ট’ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদগণের পরিচালনায় এই বিদ্যালয়টি ২১ বছরের পথপরিক্রমায় সচেতন অভিভাবকের কাছে আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

শিক্ষক ও পাঠক্রম
ট্রাস্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক বাহার উদ্দিন মো. জোবায়ের শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, একটি পরিকল্পিত, মানসম্মত ও সরকার অনুমোদিত (EIIN: 132075) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার শিক্ষার্থীরা PECE, JSC এবং SSC পরীক্ষায় অত্র প্রতিষ্ঠানের নামে সার্টিফিকেট পায়। শিক্ষা কৌশল নির্ধারণে এখানে শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আছেন। তাঁরা নিয়মিত প্লে থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর সামগ্রিক উন্নয়ন ও উৎকর্ষের জন্য প্রথাগত পদ্ধতির উপর ছেড়ে না দিয়ে ক্রমাগত উৎকৃষ্ট পদ্ধতির উপর জোর দিয়ে থাকেন। স্ব স্ব বিষয়ে মাস্টার্স এবং বি.এড, এম. এড ডিগ্রীধারী অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলী পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে প্রস্তুত পাঠ টিকা অনুসারে পাঠদানের কাজ সম্পন্ন করেন। ফলে ক্লাসের পড়া ক্লাসেই আদায় হয়, প্রাইভেট পড়ার প্রয়োজন পড়েনা। শিক্ষাবিজ্ঞানের সফল প্রয়োগে বিগত বছর সমূহে সকল বোর্ডপরীক্ষায় আমাদের ছাত্রছাত্রীদের এ প্লাস প্রাপ্তিসহ শতভাগ পাসের সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তাই শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের স্কুলকে পিএসসি, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণের অনুমোদন প্রদান করেছেন যা অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেই। ফলে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পিএসসি, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষা ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজের নামেই দেবে।
সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দ এ বিষয়টি লক্ষ্য করবেন যে, অনুমোদন নেই এমন বিদ্যালয়ে ভর্তি করালে বোর্ড পরীক্ষায় নানা জটিলতায় পড়তে হয়।

মানসম্মত ও ডিজিটাল পাঠদান পদ্ধতি
এ প্রসঙ্গে স্কুল অধ্যক্ষ ইমাম গাজ্জালী ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যাপক হাবীব রহমত উল্লাহ জানান, আমরা শিক্ষার্থীদের শিখনক্রিয়ায় কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করি। প্রথমত :মানবতাবাদী শিখনতত্ত্ব- এক্ষেত্রে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের স্তরে নেমে এসে তাদের বন্ধু হয়ে শ্রেণিশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ করেন। দ্বিতীয়ত: Brain Storming বা মাথা খাটানো পদ্ধতি-এ ক্ষেত্রে শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য আলোচনার পর কিছু সমস্যা সমাধান করতে দেবেন, যা তারা বুদ্ধি খাটিয়ে সমাধান করবে।এতে করে ঐ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তার সুযোগ সৃষ্টি হয়। তৃতীয়ত Group Discussion বা দলগত আলোচনা-এতে ৪/৫ জনের একটি দল গঠন করে দেয়া হয় যাতে তারা পাঠ সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করে ধারণা পরিষ্কার করতে পারে। চতুর্থত Pair Teaching বা জোড়া শিক্ষণ- এখানে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সাথে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রদের সাথে জুড়ে দেয়া হয়। এতে এগিয়ে থাকা শিক্ষার্থী পিড়া ভালো বুঝতে পারেনি যারা তাদের শিখনে সাহায্য করে। এটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি আধুনিক পদ্ধতি। এ ছাড়াও রয়েছে Postbox Solving Method, Mind Mapping Method সহ বেশ কিছু অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি।

অন্যদিকে মাল্টিমিডিয়া এবং ওভারহেড প্রজেক্টর ব্যবহারের মাধ্যমে শ্রেণীকক্ষকে অত্যন্ত সহজবোধ্য ও আনন্দময় করে তোলা হয়েছে। এখানকার শিক্ষকগণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। প্লে -নার্সারী ক্লাসগুলো ছোট্টমণিদের জন্য সাজানো হয়েছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে। মজার সব সিডির মাধ্যমে বর্ণমালা ও সংখ্যায় হাতেখড়ি হয় ওদের। এখানে সকল ক্লাসের কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামলূক। একজন অভিজ্ঞ বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ার পরিচালনা করছেন এই শিক্ষা কার্যক্রম। এখানে ছাত্র এবং ছাত্রীদের জন্য রয়েছে পৃথক ক্লাসরুম ও সময়সূচী।

করোনাকালীন শিক্ষা ব্যবস্থাপনা
এ প্রসংগে অধ্যক্ষ বলেন, বিশ্ব এখনো করোনা ভাইরাসের বিপর্যয়কাল অতিক্রম করছে। এই চরম পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার যে ঘাটতি হয়েছে তা পূরণের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ ১ এপ্রিল ২০২০খ্রিষ্টাব্দ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা নিজস্ব Youtube Channel & Facebook Page এ সিলেবাসভিত্তিক অনলাইন ক্লাস চালু করেছি। মোবাইল ফোন, Youtube Channel, Facebook, WhatsApp, Email, Website & Mobile SMS এর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক দৈনন্দিন কার্যাবলি নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছি। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নার্থে নিজস্ব Website দ্বারা পরীক্ষা গ্রহণ করেছি।

পড়াশুনা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্রত্যেক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য হ্যান্ডনোট ও সাজেশন প্রদান করেছি। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিকের পূর্বপ্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা সন্তোষজনকভাবে সম্পাদন করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। সর্বোপরি করোনাকালীন ২০২০ সালে ১৬ হাজার এবং ২০২১ সালে ১০ হাজার অনলাইন ক্লাসের মাইলফলক অতিক্রমকারী একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্রগ্রাম ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ। আমাদের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল এককভাবে ৩০০ অনলাইন ক্লাস সম্পন্ন করে রেকর্ড গড়েছেন।

সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলী ও স্কাউটিং
ভাইস প্রিন্সিপ্যাল মো: সিকান্দার জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুর সৃজনশীল ক্ষমতার পরিপূর্ণ বিকাশে অত্যন্ত সজাগ চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরী স্কুল। প্রতি বৃহস্পতিবার বিশেষজ্ঞ দ্বারা প্রণীত বাংলা উচ্চারণের ক্লাস, আবৃত্তি, বিতর্ক, গানের ক্লাস, চিত্রাঙ্কন ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। ইংলিশ লিসেনিং ও স্পিকিং এ পারদর্শীতা অর্জন করার জন্য রয়েছে ল্যাংগুয়েজ ল্যাব। আউটডোর-ইনডোর গেমসের পাশাপাশি নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। প্রতিদিন প্রাত্যহিক সমাবেশে শরীর গঠনমূলক ব্যয়াম করানো হয়। এ ছাড়া স্কুল অধ্যক্ষ বাংলাদেশ স্কাউট, চট্টগ্রাম জেলা রোভার এর সহকারী কমিশনার অধ্যাপক হাবীব রহমত উল্লাহর নেতৃত্বে কাব, বয় ও রোভার স্কাউটিংয়ের ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের চৌকষ ব্যক্তিত্ব গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। জাতীয় পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট স্কাউটস পরীক্ষায় ২০১৯ সালের জাতীয় জাম্বুরীতে এই স্কুলের ৪ জন ছাত্র প্রেসিডেন্ট স্কাউটস পুরস্কার লাভের গৌরব অর্জন করেছে। ২০২০ সালে আরও ৬ জন শিক্ষার্থী প্রেসিডেন্ট স্কাউটস পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। সম্প্রতি আমাদের দুজন স্কাউট মুনতাসির ইসলাম ওয়াছি (১০ম শ্রেণি), শ্রাবণ আহমেদ ইমন (৮ম শ্রেণি) দক্ষিণ কোরিয়াতে ২০২৩ সালের বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরীতে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীর মননশীলতা বিকাশের জন্য নিয়মিত দেয়ালিকা ও বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। জাতীয় সকল দিবসসমূহ পালিত হয় সাড়ম্বরে।

বিজ্ঞানাগার ও বিজ্ঞান ক্লাব
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের যাতে প্রচুর আগ্রহ জন্মায় ও বুঝতে সহজ হয়, ব্যবহারিক ও প্রয়োগিক দিক স্পষ্ট হয়ে ওঠে,সেজন্য এই্ স্কুলে রয়েছে উন্নত বিজ্ঞানাগার। বিজ্ঞান ক্লাবে নানা সৃজনশীল কর্মকান্ড এবং বিজ্ঞান মেলা, গণিত অলিম্পিয়াড, রসায়ন অলিম্পিয়াড আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান মনস্ক হিসাবে গড়ে তুলতে সফল উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

আবাসিক ব্যবস্থাপনা
ট্রাস্ট ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াসার সাবেক ডিএমডি মো: গোলাম হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় ছাত্রদের শিক্ষা, শৃঙ্খলা, আচরণে পরিপূর্ণতা প্রদান ও মানবিক মূল্যবোধ গঠনের নিমিত্তে আবাসিক ছাত্রদের আমরা প্রয়োজনীয় নৈতিক শিক্ষা ও শিষ্টাচার চর্চার মাধ্যমে দৈনন্দিন রুটিন অনুসরণ করে সুশৃঙ্খল অবস্থান নিশ্চিত করেছি। একজন হোস্টেল সুপার, এক বা একাধিক রেসিডেন্ট টিচার এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাউস টিউটর ও ধর্মীয় শিক্ষকের সমন্বয়ে হোস্টেল পরিচালিত হয়ে থাকে।

পরিশেষে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মিয়ানমার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি ও শিক্ষানুরাগী এস, এম, নুরুল হক (সি আই পি) বলেন, শিক্ষার একটি মহৎ উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যক্তিকে সুস্থ, স্বাভাবিক ও অনন্য মানুষরুপে গড়ে তোলা। অভিভাবকের একটি সিদ্ধান্তই সন্তানের অপরিমেয় সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ বিকাশের চূড়ান্ত পথনির্দেশ। আমরা আপনার সন্তানকে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের পাশাপাশি চরিত্রবান ও আদর্শ মানুষরুপে গড়ে তোলার জন্য আন্তরিক পরিচর্যা করার কথা দিলাম। বিস্তারিত জানতে ১১৬, চট্টেশ্বরী রোড, চকবাজার, Chattogram Laboratory School & College ফেসবুক পেজে এবং ৬২৫৪০৩, ০১৮২০-২৩২০০০ ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজনগণের কাছে দুর্নীতিমুক্ত সেবা পৌঁছাতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে করোনায় নতুন শনাক্ত ৮২