আজ একজন মজলুম মানুষের গল্প বলবো। গভীর রাত! একটা মানুষ জায়নামাযে সিজদাহ্রত। তার চোখ থেকে অবিরত পানি ঝরছে। হঠাৎ তার চোখের পানির প্রতিটি ফোঁটা আর্তনাদ করে বলে উঠলো– ‘যারা তোমাকে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে, হয়রানি করছে, তোমার নামে মিথ্যা অপপ্রচার করছে, ব্যক্তিগত আক্রমণ করে যারা তোমার সুনাম নষ্ট করছে, চরিত্রে কালিমা লেপন করছে তারা ধ্বংস হোক। তারা অভিশপ্ত হোক। তাদের এবং তাদের সন্তানদের জীবনেও অনুরূপ মিথ্যা অপবাদ নেমে আসুক। যাতে তারা বুঝতে পারে, মিথ্যা অপবাদ বহন করাটা কতো কষ্টের।’ চোখের পানির আহাজারি শুনে মানুষটি খুব দ্রুত সিজদাহ্ থেকে মাথা তুলে ফেললো। সাথে সাথে মানুষটির আত্মা কথা বলে উঠলো– ‘তুমি সিজদাহ্ থেকে মাথা তুলে নিলে কেন! তোমার চোখের পানি আর্তনাদ করে মহান আল্লাহর দরবারে নালিশ করছিলো।’ মানুষটি চোখ মুছতে মুছতে বললো, ‘মহান আল্লাহ অভিশাপ পছন্দ করেন না। আমি যতো কষ্টই পাই না কেন, আমি কখনো কারো অভিশপ্ত জীবনের কারণ হতে চাই না।’
তখন মানুষটির আত্মা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা বললো–
আত্মা বললো, ‘তুমি যতই মুখে অভিশাপ না দাও না কেন, আত্মার অভিশাপ থেকে অন্যায়কারী কখনো বাঁচতে পারবে না। আত্মার বদদোয়া সরাসরি মহান আল্লাহর দরবারে গিয়ে নালিশ করে, বিচার চায়। আর মহান আল্লাহ অবশ্যই সর্বশ্রেষ্ঠ ন্যায়বিচারক।’ আসলে মানুষের আত্মার আহাজারি খুব ভয়ংকর। আমরা যেন কারো নামে মিথ্যা অপবাদ না দিই, অপপ্রচার না করি। কারো নামে গীবত না করি। কারো সুনাম নষ্ট না করি, অকারণে কাউকে যেন কষ্ট না দিই। কারণ, একটা সময় আসবে আপনি ‘আই.সি.ইউ’–তে অচেতন, মৃত্যুশয্যায়। কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার জন্য তাকে আপনি খুঁজে পাচ্ছেন না। ক্ষুদ্র স্বার্থে অন্ধ হয়ে একসময় যাকে আপনি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যার মান সম্মান আর সুনাম নষ্ট করেছিলেন।
এই উপলব্ধিগুলো মাঝে মাঝে নিজেকে তাড়িত করে। সমস্ত দিনের শেষে যখন নতজানু হয়ে জায়নামাজে বসি, নিজেকে বড় বেশি তুচ্ছ মনে হয়। সারাদিনের ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভেসে আসে। নিজেকে আরো বেশি তুচ্ছ মনে হয়। মনে হয়, কে আমি! কিসে আমার এত অহংকার! সমস্ত অহংকারের একক অধিপতিতো শুধুই একজন…. “মহান আল্লাহ্“। যদি তাই–ই হয়, তাহলে কেন আমরা নিজেকে দুনিয়ার বাদশাহ ভাবি! কেন আমরা মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করি, অকারণ অপমান করে আনন্দ পাই, অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজে শান্তি পাই! কিছু কিছু কষ্ট, লুকানো চোখের জল, দাঁতে দাঁত চেপে হজম করা অপমান এমন হয়.. যা সরাসরি মহান আল্লাহর দরবারে গিয়ে বিচার চায়। কোনো মানুষ যখন অকারণ কষ্ট পায়, অপমানিত হয়, অবহেলার শিকার হয়, অত্যাচারিত হয় কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারে না, ঘুরে দাঁড়াতে পারে না তখন সে মহান আল্লাহর দৃষ্টিতে ‘মজলুম’ এর পর্যায়ে পৌঁছে যায়। শুনেছি মহান আল্লাহ্ মজলুমের দোয়া / বদদোয়া কখনোই ফিরিয়ে দেন না, সরাসরি কবুল করেন। আসলে মানুষের নীরব কষ্ট কষ্টদাতাকে কঠিনভাবে অভিশাপ দেয়। তাই আমাদের উচিত অকারণে, এমনকি কারণবশত ও পারতপক্ষে কাউকে যেন কষ্ট না দিই, কারো হক যেন নষ্ট না করি, কাউকে অপমান না করি, তুচ্ছজ্ঞান না করি। অন্যের ক্ষতির চিন্তা না করি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমি যদি কাউকে তার ন্যায্য হক থেকে বঞ্চিত করি, আমি যদি অন্যায়ভাবে কারো দুঃখ, কষ্ট, অপমান আর দীর্ঘশ্বাসের কারণ হই.. তবে সেই দীর্ঘশ্বাসের দীর্ঘ হিসাব আমাকে এই পৃথিবীতেই চুকাতে হবে। লেখাটা শেষ করার আগে, একটা টিপস শেয়ার করতে চাই…‘কারো দিকে আংগুল তোলার আগে নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত আমার নিজের হাত যথেষ্ট পরিষ্কার কিনা!’ তাহলেই এসব পাপ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। মহান আল্লাহ আমাদের সর্বাবস্থায় হেফাজত করুন। মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে যে কোন মজলুমের বদদোয়া / অভিশাপ থেকে বাঁচার তৌফিক দান করুন। আমিন।