পৃথিবীতে ক্রমবর্ধমান বেই চলেছে আত্মহত্যার মতো আত্মবিধ্বংসী ঘটনা। প্রতিনিয়ত মানুষ কোনো না কোনো কারণে বেছে নিচ্ছে আত্মা হননের পথ, যা বর্তমান সময়ের আশঙ্কার বিষয়। নিয়ন্ত্রণহীন হারে বেড়েই চলেছে আত্মহত্যার ঘটনা। দমানো যাচ্ছেনা গোটা বিশ্বের এই ব্যাধিকে। বয়সে ছোট-বড় সব শ্রেণির মানুষ কোনো না কোনো কারণে এই পথ বেঁছে নিচ্ছে। আত্মহত্যার পেছনে কতগুলো কারণকে দায়ী করা যেতে পারে। সাধারণত পারিবারিক অশান্তি, বেকারত্ব, মানসিক অবসাদ, সন্তান ও বাবা মায়ের বোঝাপড়ার অমিল, সম্পর্কের তিক্ততা, অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা, প্রেমে ব্যর্থতা, আকাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন না হওয়া, অপসংস্কৃতির প্রভাব, হীনম্মন্যতাবোধ, যৌতুকের কারণে নির্যাতন সর্বোপরি ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে একজন মানুষ আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য হারে তরুণ প্রজন্মের আত্মহত্যা একটি দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তাই আমাদের প্রত্যেকের স্ব স্ব অবস্থান থেকে এর প্রতিরোধে দায়িত্ববান হওয়া উচিত। এর মতো একটি বিধ্বংসী ব্যাধি হতে পরিত্রাণ পেতে প্রথমেই নিজেকে ভালোবাসতে হবে। আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে পারিবারিক -সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করা অনেক বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা ও ধর্মীয় চর্চা বাড়াতে হবে। বেকারত্বকে আত্মহত্যা বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাই রাষ্ট্রকেও এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
প্রত্যেকের সঙ্গ নির্বাচনে হতে হবে সচেতন। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আত্মহত্যা প্রতিরোধ শীর্ষক সেমিনার, সভা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সামাজিক সংগঠনগুলো এগিয়ে আসতে পারে। আর্থিক ব্যবস্থাপনা, ক্যারিয়ার কেন্দ্রিক দক্ষতা উন্নয়ন, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচারণা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, সঠিক কাউন্সিলিং করা, সাইকোথেরাপি, ইতিবাচক মনোভাব ও পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা হ্রাস করা যেতে পারে। বর্তমান প্রজন্ম কমবেশি সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অনেক বেশি সক্রিয়। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আত্মহত্যার প্রবণতা হ্রাস বিষয়ক গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমেও এর প্রবণতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। জীবনের নিয়মে সময়ের আবর্তনে প্রতিকূলতা আসবে, সেই প্রতিকূল সময়কে দৃঢ় চিত্তে মোকাবেলা করার মাধ্যমেই আত্মহত্যার প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে। আত্নোপলব্ধির অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমেই বিনাশ হোক আত্মহত্যার প্রবণতা।