ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে নিজের গায়ে আগুন দেওয়া ঠিকাদার গাজী আনিস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। দেহের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া আনিসকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যু হয় বলে ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানান।
৫০ বছর বয়সী গাজী আনিসের বাড়ি কুষ্টিয়ায়, তিনি ঠিকাদারি ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। এক সময় কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। আমিন ম্যানুফাকচারিং কোম্পানি হেনোলাক্সের কাছ থেকে পাওনা কোটি টাকা না পেয়ে ক্ষোভ থেকে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
এদিকে গাজী আনিসের আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আমিন ম্যানুফাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন এবং পরিচালক ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ বাহিনীর সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান গতকাল মঙ্গলবার রাতে বলেন, রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আনিসের আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তার বড় ভাই নজরুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। ওই মামলাতেই আমিন ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার বিকেলে প্রেস ক্লাবের ফটকের ভেতরে খোলা জায়গায় আনিস নিজের গায়ে আগুন দেন। শোয়া অবস্থায় তার গায়ে আগুন জ্বলছে দেখে আশপাশ থেকে সবাই ছুটে যান। তারা পানি ঢেলে আগুন নেভান। তবে ততক্ষণে তার গায়ের পোশাক সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। পরে তাকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।
আনিসকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়ার সময় ছিলেন মো. আলী নামে এক সংবাদকর্মী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি বলেছিলেন, তার সঙ্গে একটু কথা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, একটি কোম্পানির কাছ থেকে তিনি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পাবেন। ওই কোম্পানি তা দিচ্ছে না। পাওনা পেতে তিনি এর আগে মানববন্ধন করেছিলেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তাই তিনি নিজের গায়ে আগুন দেন।
গত ২৯ মে ঢাকায় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে হেনোলাক্স গ্রুপে সোয়া কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ করেছিলেন আনিস। তার দুদিন পর ৩১ মে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি হেনোলাক্স গ্রুপের মালিকের সঙ্গে তার সম্পর্কের সূত্রপাত এবং বিনিয়োগ করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগগুলো তুলে ধরেছিলেন।
শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, ২০১৬ সালে হেনোলাক্সের কর্ণধার ডা. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে পরিচয় থেকে ঘনিষ্ঠতা হয় তার ভাই আনিসুরের। তারা একসঙ্গে বিদেশ ভ্রমণও করেন। তাদের মধ্যে খুবই সখ্য গড়ে উঠে। ২০১৮ সালে তারা (নুরুল দম্পতি) হেনোলাক্স কোম্পানিতে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিনিয়োগ করার জন্য আনিসুর রহমানকে অনুরোধ করেন। তাদের অনুরোধে বিশ্বাসের ভিত্তিতে প্রথমে এক কোটি এবং পরে তার বন্ধুর কাছ থেকে আরও ২৬ লাখ টাকা নিয়ে আনিসুর হেনোলাক্সে বিনিয়োগ করেন।