আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব সংগঠন ‘জাতীয় যুবশক্তি’। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানের শহীদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউতে আয়োজিত আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ১৩১ সদস্যের কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে এই সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে। অনুষ্ঠানে জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও মুখ্য সংগঠকের নাম ঘোষণা করেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী। কমিটির অন্যদের নাম ঘোষণা করেন জাতীয় যুবশক্তির সদস্য সচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম। জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক হিসেবে অ্যাডভোকেট মো. তারিকুল ইসলাম, সদস্য সচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম ও মুখ্য সংগঠক ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সোহেলের নাম ঘোষণা করা হয়। নতুন কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন তুহিন মাহমুদ। যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন–প্রীতম সোহাগ, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নেসার উদ্দিন, গোলাম মোনাব্বের, আশিকুর রহমান, কাজী আয়েশা আহমেদ, হিজবুর রহমান বকুল, মারুফ আল হামিদ ও আসাদুর রহমান। সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব হয়েছেন দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী ও নাহিদা বুশরা। খবর বাংলানিউজের।
যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন–নিশাত আহমেদ, রাদিত বীন জামান, মো. ইনজামামুল হক, শাওন মাহফুজ, লুৎফর রহমান, নীলা আফরোজ, মো. আবু সুফিয়ান, মাহমুদা সুলতানা রিমি, রাশেদুল ইসলাম খালেদ, শফিকুল ইসলাম এবং ইসরাত জাহান বিন্দু। এছাড়া মুখ্য যুব উন্নয়ন সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন খালেদ মাহমুদ মুস্তফা। যুগ্ম যুব উন্নয়ন সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন শাকিল আহমেদ ইকবাল ও সনজিদা আক্তার মনি। সিনিয়র সংগঠক হয়েছেন ইয়াসিন আরাফাত। এ সময় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়কারী হান্নান মাসাউদ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুরের পর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দেন জাতীয় যুব শক্তির নেতাকর্মীরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। এ সময় অংশগ্রহণকারীদেরকে ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘আপস না, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘দালালি না, রাজপথ, রাজপথ’, ‘দিল্লি না, ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘যুব শক্তি আসছে, রাজপথ কাঁপছে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. তারিকুল ইসলাম। ঘোষণাপত্রের শুরুতেই তিনি জুলাইয়ের সকল শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, জাতীয় যুবশক্তি বিশ্বাস করে, ইতিহাসের প্রতিটি মৌলিক পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিয়েছে তরুণেরা। এখন সময় এসেছে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও নতুন প্রজাতন্ত্র নির্মাণের। আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক ধারাবাহিক লড়াইয়ের সন্ধিক্ষণে যার সূচনা হয়েছিল ১৯৪৭ সালের উপনিবেশবিরোধী আজাদীর লড়াইয়ে। পরবর্তীতে তা রূপ নেয় ১৯৭১–এর স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং এক নতুন দিশা ও প্রত্যয়ের জন্ম দেয় ২০২৪–এর ঐতিহাসিক ছাত্র–গণঅভ্যুত্থানে।
এই অভ্যুত্থান কেবল ক্ষোভের বিস্ফোরণ নয় এটি ছিল একটি নতুন রাজনৈতিক কল্পনার জন্মমুহূর্ত, যেখানে তরুণেরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে : বর্তমান ব্যবস্থা আর চলতে পারে না, প্রয়োজন এক নতুন রাষ্ট্রকল্প, এক নতুন পথ। নতুন রাষ্ট্র ও রাজনীতির আকাঙ্ক্ষাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করেছিল। যুবশক্তি জুলাই গণঅভ্যুত্থানেরই ধারাবাহিকতা।
জাতীয় যুবশক্তি দায় ও দরদের রাজনীতি চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেখানে নেতৃত্ব মানে দায়িত্ব গ্রহণ, সহানুভূতি, সহনশীলতা এবং নাগরিক সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া। দায়, সহানুভূতি ও মানবিকতা ছাড়া রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা সম্ভব নয়। দায় ও দরদের রাজনীতিই অধিকার ও সংহতির ভিত্তি। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে নাগরিক মর্যাদা থাকবে শুধু কাগজে নয়, বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত হবে। যেখানে রাষ্ট্র সকল ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও জাতিসত্তার মর্যাদা দেবে। যেখানে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি কেবল স্লোগান নয়, রাষ্ট্রীয় নীতির ভিত্তি হবে। যেকোনো ধর্মবিদ্বেষ ও উগ্রতাকে পরিহার করে বৃহত্তর জনগণের ধর্মবোধ ও সামাজিক–নৈতিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আমরা সমপ্রীতি, ইনসাফ ও নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
‘বাংলাদেশপন্থা’ আমাদের রাজনৈতিক চিন্তার স্বতন্ত্র মেরু উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও মানুষের সংগ্রাম থেকে উৎসারিত একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রচিন্তা। এটি একাধারে ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং আগ্রাসনবিরোধী। আমরা কোনো গ্লোবাল শক্তির ছায়ায় নয়, বাংলাদেশের নিজস্ব দিশা, আত্মমর্যাদা ও জাতীয় স্বার্থে বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ কেবল একটি রাষ্ট্রীয় সীমানা নয়, এটি একটি বদ্বীপীয় সভ্যতা। যা বহু ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক, পাহাড় থেকে নদী পেরিয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অঞ্চলে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও কৌশলগত শক্তি হিসেবে নেতৃত্ব নিতে হলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সভ্যতাগত রূপান্তর প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি, দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন পথ দেখাবে বাংলাদেশ।
গণতন্ত্র ও সুশাসনের প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা চাই এমন এক কাঠামো, যা কেবল ভোটেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। প্রতিটি সিদ্ধান্ত, আইন ও নীতিতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হবে, বিচার বিভাগ হবে দলনিরপেক্ষ, স্থানীয় সরকার হবে ক্ষমতাসম্পন্ন এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সরকার হবে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক।