আতাউল গণি ওসমানী (১৯১৮–১৯৮৪) বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হলে তিনি এই মহান দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। বিশিষ্ট এই রাজনীতিবিদের জন্ম ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে পরের বছর ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীসময়ে ব্রিটিশ ভারতীয় সামরিক একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ শেষে রাজকীয় বাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগ দেন। বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি পেয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ওসমানী পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্নেল পদে উন্নীত হন। ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস–এর অতিরিক্ত কমান্ড্যান্টের দায়িত্বে থাকাকালীন ইপিআর–এ অবাঙালিদের নিয়োগ বন্ধ, প্রথমবারের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়দের এই বাহিনীতে নিযুক্তির ব্যবস্থা, চট্টগ্রাম সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা, পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বাঙালিদের জন্য বেশি হারে পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে বাঙালিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখেন। তাঁর একক প্রচেষ্টাতেই গড়ে উঠেছিল তৎকালীন বেঙ্গল রেজিমেন্ট। ৭০–এ যোগ দেন রাজনীতিতে। এ বছর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ৭১–এ অংশ নেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ওসমানী সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নেন এবং বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় নৌ ও বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এক বছর পর মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে নানাভাবে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকেছেন। আজীবন অকৃতদার ওসমানী সম্পূর্ণভাবে নিবেদিত ছিলেন রাজনীতিতে। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্মরণে ঢাকায় নির্মাণ করা হয়েছে ‘ওসমানী উদ্যান’ ও ‘ওসমানী মেমোরিয়াল হল’। সিলেট শহরে তাঁর নামে একটি হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়া সিলেটে ওসমানীর বাসভবনটি জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত।