আতরের পাশাপাশি বাখুরেও আগ্রহ

চাহিদা বেশি হাতে বোনা টুপির

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

সাত বছরের তৌসিফ বাবার সঙ্গে এসেছে টুপি কিনতে। তার পছন্দের রঙ কালো। তাই সে কালো রঙের টুপি কেনার বায়না ধরেছে। কিন্তু বাবা চায় একটু রঙিন টুপি কিনে দিতে। এতে রাজি হয় না তৌসিফ। শেষ পর্যন্ত তাকে পছন্দের টুপিই কিনে দিলেন বাবা আশরাফ। এ সময় তিনি নিজের জন্যও একটা টুপি কিনেন। একই দোকান থেকে কিনলেন আতরও। গতকাল বিকেলে নগরের চকবাজার গোলজার টাওয়ারে টুপির দোকান আয়াত স্টোরে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

শহরে আতরটুপি বিকিকিনির জন্য খ্যাতি আছে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ মার্কেটের বিভিন্ন দোকানগুলোর। গত কয়েকদিন ধরে এসব দোকানেও ভিড় বেড়েছে ক্রেতাদের। রেয়াজুদ্দিন বাজারসহ অন্যান্য শপিং মলের নির্দিষ্ট দোকানগুলোর বাইরে ফুটপাত থেকেও আতরটুপি কিনছেন অনেকে।

আশরাফসহ আতরটুপি কিনতে আসা একাধিক ক্রেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, সুগন্ধী হিসেবে সারা বছর পারফিউম ব্যবহার করলেও ঈদে আতরই জনপ্রিয় এবং সবার পছন্দের তালিকায় থাকে শীর্ষে। আবার ঈদের দিন নতুন জামাকাপড় এবং নতুন জুতোর সঙ্গে চায় নতুন টুপি। তাই অন্যান্য কেনাকাটা শেষে ঈদ উদযাপনের অন্যতম এই দুই অনুষঙ্গ আতরটুপি কিনতে এসেছেন তারা। এদিকে ক্রেতার চাহিদাকে মাথায় রেখে নানা ডিজাইনে এবং নানা রঙের টুপি নিয়ে দোকান সাজিয়েছেন দোকানিরা। এর মধ্যে দেশি টুপির পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন দেশের টুপিও (আমদানিকৃত ও রেপ্লিকা আছে)। একইসঙ্গে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন নামীদামি ব্র্র্যান্ডের আতরও।

আতরের পাশাপাশি এবার ঘরে সুগন্ধ ছড়াতে এক ধরনের ‘বাখুর’ও বিক্রির তালিকায় এগিয়ে আছে। এটা আগরবাতির মতো জ্বালানো হয়। বিক্রেতারা বলছেন, আতরটুপির পাশাপাশি এরাবিয়ান কালচার বাখুর ব্যবহারের প্রচলন বাড়ছে চট্টগ্রামে।

বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, হাটহাজারী ও চকরিয়ায় হাতে বোনা টুপির চাহিদা রয়েছে প্রচুর। এর বাইরে দেশীয় তৈরি এক ধরনের টুপির কদর আছে যেগুলো ওমানি হ্যান্ড মেইড টুপি বলে পরিচিত। টুপিগুলো ওমানি টুপির আদলে বাংলাদেশে তৈরি করা, যা স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়।

এছাড়া জালি টুপি, আব্বাসী, ফিরোজি ও নুরানী টুপি, পাকিস্তানি হাতের বানানো, পাকিস্তানি নরমাল, পাকিস্তানি গর্জিয়াস, ইন্ডিয়ান বগিস, ইন্ডিয়ান মুম্বাই টুপি, গুজরাটি, ইন্দোনেশিয়ান, তুর্কিস, রুমি ক্যাপ, অটোম্যান টুপি, হাতে তৈরি কাশ্মীরি ডিজাইন, বগিস, ক্যালিগ্রাফি, মালয়েশিয়ান টুপি বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। দেশীয় টুপি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায়। ইন্দোনেশিয়ান ও মালয়েশিয়ান টুপি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। অন্য টুপিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা দামের টুপিও রয়েছে।

বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আতরের মধ্যে রয়েছে আবদুস সামাম কোরাইশী ব্র্যান্ডের আতর। বাংলাদেশের সিলেট থেকে আসা অর্গানিক অয়েল বা আতর, যেটা সিলেটি উদ নামেও পরিচিত। রয়েছে ভারতের আজমল ব্র্যান্ড ও আল হারমাইন ব্র্যান্ডের আতর।

আয়াত স্টোরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা লোকমান হোসেন আজাদীকে বলেন, এবার গিলাপে কাবা বা কিসুয়াতুল কাবা নামে আতরের চাহিদা রয়েছে। কাবার গিলাপে যে ঘ্রাণ ব্যবহার করা হয় আতরটাও একই ঘ্রাণের। কোম্পানিভেদে প্রতি ৩ এমএল ৯০০ টাকা থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এটা। এছাড়া মাসকাল দালাল, মাসকাল কাবা ৩০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, আতর টুপির পাশাপাশি এরাবিয়ান কালচারের বাখুরের চাহিদা বাড়ছে। বাখুর বার্নার ও কাঠ ৯৫০ টাকা থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আন্দরকিল্লার আহসান শপের মুহাম্মদ রাহাত বলেন, এবার ডলার সংকটের কারণে বাইরের টুপি কম এসেছে। তবে দেশি টুপির প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

আন্দরকিল্লা মসজিদ মার্কেটের তাওহিদ পারফিউমের স্বত্বাধিকারী মো. ফয়সাল বিন মো. তাওহীদ আজাদীকে বলেন, টুপির পাশাপাশি আতরও ভালো বিক্রি হচ্ছে। গতবারের চেয়ে এবার দামী টুপি কম বিক্রি হচ্ছে।

আমিন নামে এক ক্রেতা বলেন, ঈদ আনন্দের প্রধান আকর্ষণ ঈদের নামাজ। নামাজ পড়ার জন্য টুপি অপরিহার্য। এক্ষেত্রে নতুন টুপি না হলে কি চলে? তাই টুপি কিনতে আসা। তাছাড়া সুগন্ধী হিসেবে আতর আলাদা ভাবগাম্ভীর্য তৈরি করে। তাই ঈদের দিন পারফিউমের বদলে আতরই পছন্দ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে আজ
পরবর্তী নিবন্ধকৃষক লীগের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ