দুই মাসের বিল বকেয়া থাকায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পরিচালিত মেমন মাতৃসদন হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় পিডিবি। এতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর ভোগান্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। তবে সাময়িক অসুবিধা হলেও জেনারেটর থাকায় বড় ধরনের সমস্যা হয়নি বলে দাবি করেছেন চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। পরে চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বকেয়া পরিশোধে আশ্বস্ত করায় দুপুর ২টার দিকে পুনরায় সংযোগ দেয়া হয়। মাঝখানে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল হাসপাতালটি। জুলাই ও আগস্ট মাসে হাসপাতালটির বকেয়া বিলের পরিমাণ ৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৮০ টাকা।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকাকালে ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে ৩২ জন প্রসূতি ভর্তি ছিলেন। এ হাসপাতালে মূলত গাইনি ও শিশু চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। হাসপাতালটিতে একটি জেনারেটর রয়েছে। সাধারণত টানা দুই ঘণ্টা চালানোর পর ঘণ্টাখানেক এটি বন্ধ রাখা হয়। তবে পুরনো হয়ে যওয়ায় সবসময় টানা ২ ঘণ্টা চালানো হয় না এটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় তাদের সমস্যা হয়েছে। জেনারেটর চালালেও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন ছিল না। আধঘণ্টা পরপর জেনারেটর ছাড়া হয়। অপারেশন থিয়েটার ও রোগী বহনের লিফট বন্ধ ছিল। জেনারেটর বন্ধ হলে হাসপাতালের ভেতর অন্ধকার হয়ে যায়। গরমের মধ্যে ফ্যান চালাতে না পারায় অস্বস্তিতে পড়েন রোগীরা।
মেমন মাতৃসদন হাসপাতালের ইনচার্জ সৈয়দ দিদারুল মনির রুবেল আজাদীকে বলেন, কোনো নোটিশ না দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে সাময়িক অসুবিধা হলেও বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি। চিকিৎসাসেবায় কোনো প্রভাব পড়েনি। দেড় ঘণ্টা মত সংযোগ ছিল না। ওই সময়ে আমরা জেনারেটর চালিয়েছি। জেনারেটর দুই ঘণ্টা চালানো হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকাকালে কয়জন রোগী ছিল জানতে চাইলে বলেন, ৩২ জন রোগী ছিল। দৈনিক ৮–১০টা ডেলিভারি হয়। সার্জারিতে কোনো সমস্যা হয়নি।
পিডিবি মাদাড়বাড়ি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খোরশেদ আলী চৌধুরী আজাদীকে বলেন, বকেয়ার জন্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশনের চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার বকেয়া পরিশোধে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে আমাদের অবগত করেন। এরপর হাসপাতাল বিবেচনা করে সংযোগ দেয়া হয়।
চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমাম হোসেন রানা আজাদীকে বলেন, ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। বিল বেশি দেয়ায় সেটা কোয়ারি করতে দেয়া হয়। কিন্তু কিছু না জানিয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। পরে পিডিবির প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি। ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে সংযোগ দিয়ে দেয়। জেনারেটর থাকায় আমাদের তেমন সমস্যা হয়নি।
চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের জোন প্রধান আমীর আবদুল্লাহ খান আজাদীকে বলেন, আমাদের সাথে আলাপ না করেই সংযোগ কেটে দেয়। বকেয়া পরিশোধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চেকও সাইন হয়ে গেছে।
স্টাফ কোয়ার্টারেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন : মাদারবড়ি চসিক স্টাফ কোয়াটার ও সেবক কলোনির বিদ্যুৎ সংযোগও গতকাল বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে পিডিবি মাদাড়বাড়ি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খোরশেদ আলী চৌধুরী আজাদীকে বলেন, যেখানে বকেয়া আছে সেখানে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এটা নিয়মিত কাজ।