চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ উপজেলা ফটিকছড়ির আনাচে–কানাচে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন। এসবের অধিকাংশই মুসলিম স্থাপত্যের। উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নে অবস্থিত ‘উকিল বাড়ি জামে মসজিদ’ তেমনই এক প্রাচীন স্থাপনা যা মোগল আমলের স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন বলে উল্লেখ করেছেন স্থানীয়রা। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে কাঞ্চন নগর ইউনিয়ন। কাঞ্চন নগরের প্রধান সড়ক থেকে ২০০ মিটার পশ্চিমে উকিল বাড়িতে অবস্থিত উকিল বাড়ি জামে মসজিদ। বিভিন্ন সময়ে দর্শনার্থীরা আসেন এই মসজিদ দেখতে।
জনশ্রুতি রয়েছে, তৎকালীন জমিদার মনোহর আলী প্রকাশ বোচা উকিল মসজিদটি নির্মাণ করেন। সে হিসেবে এটির নামকরণ হয় উকিল বাড়ি জামে মসজিদ। মনোহর আলী সে সময় গৌর প্রদেশ থেকে ফটিকছড়িতে আসেন। তিনি ফরাসি ভাষার একজন ভারতীয় আইনজীবী ছিলেন। তার বাবা ছিলেন একজন কৃষক।
জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়ার তারাকা মিস্ত্রি এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। লোহা ও সিমেন্ট ছাড়া শুধু ৭০–৮০ প্রকারের উপাদান দিয়ে তৈরী চুরকি চুন আর ইট দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। বর্গাকার ইটসহ বিশেষ কিছু উপাদান ব্যবহৃত হয়েছে মসজিদটিতে। মসজিদের ওপরে রয়েছে একটি বড় গম্বুজ, দুই পাশে দুটি মাঝারি গম্বুজ ও ছোট–বড় ১৮টি মিনার। একসময় মসজিদের পাশে ছিল মুসাফিরখানা ও নোঙরখানা। তবে কালের বিবর্তনে তা না থাকলেও বেঁচে থাকা ১২ পুরুষের ওয়ারিশগণ ভাগাভাগি করে এ মুসাফির খানা পরিচালনা করছেন। যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা এ মুসাফিরখানায় অবস্থান করতেন। দিনে ৫০ জনের বেশি মুসাফির আসতেন এখানে। মুসাফিরদের জন্য ১২টি পুকুর আছে, এমনকি এ পুকুরগুলোর মাছ দিয়ে খাওয়ানোর নিয়মও ছিল মুসাফিরদের। বর্তমানে মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ, মুসাফিরখানা পরিচালনা ও বছরে তিনবার মুসল্লী খানা (মেজবানি) খরচের জন্য মসজিদটির নামে শতাধিক একর জমি ওয়াকফ করে যান জমিদার মনোহর আলী। বর্তমানে তার ৮ম বংশধররা মসজিদটি পরিচালনা করছেন।
মনোহর আলীর ৮ম বংশধর হাবিবুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রায় ২৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলে পূর্বপুরুষদের কাছে শুনেছি। আমার দাদারা ১২ ভাই, সবাই ভাগ করে এখনো পরিচালনা করছে সেই মুসাফির খানা। মনোহর আলী গৌর প্রদেশ থেকে এসে এ এলাকায় এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। আমরা এখন এ মসজিদ দেখাশোনা করছি। যে কেউ চাইলে এখানে আসতে পারেন।
কাঞ্চননগরের বাসিন্দা মো. জসিম বলেন, উকিল বাড়ি জামে (উইল্লেরো বাড়ি) মসজিদ ফটিকছড়ির দৃষ্টিনন্দন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। মসজিদটিতে স্থাপত্যশৈলী দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় যে কারো। এমন দৃষ্টিনন্দন মসজিদ পেয়ে আমরা কাঞ্চন নগরবাসী গর্বিত।