আট দাবিতে চট্টগ্রামে সনাতনীদের সমাবেশ

আগামী এক মাস গণসংযোগের কর্মসূচি

| শনিবার , ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী দেশব্যাপী মন্দির, হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ, খুলনায় উৎসব মন্ডলের ওপর বিচারবহিভূূত হামলা এবং আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা প্রদানের দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সম্মিলিত সনাতনী সমাজবাংলাদেশ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে উত্থাপিত ৮ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য দাবি তোলা হয় সমাবেশ থেকে। সেই সাথে ৮ দাবির সমর্থনে আগামী এক মাসব্যাপী জেলা, উপজেলা, পাড়ামহল্লায় গণসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

গতকাল শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রামের জামালখান মোড়ে আয়োজিত সমাবেশে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও শহরের ওয়ার্ডগুলো থেকে সনাতনীরা অংশগ্রহণ করেন। সনাতনীরা ‘এক দফা এক দাবি ৮ দফা মানতে হবে’, ‘আমার দেশ সবার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘আমার মাটি আমার মা, এই দেশ আমরা ছাড়বো না’, ‘রক্তে আগুন লেগেছে, সনাতনীরা জেগেছে’এমন স্লোগান দিতে থাকেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সনাতনী সমাজবাংলাদেশের অন্যতম মুখপত্র ও পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।

বক্তব্য রাখেন, পটিয়া পাচুরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ রবীশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ, বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত সচিদাননন্দ পুরী মহারাজ, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, নন্দনকানন মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক তারণনিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারী, তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ প্রাঞ্জলানন্দ পুরী মহারাজ, শ্রীমৎ মুরারী দাস বাবাজী, শ্রীমৎ কৃষ্ণ দাস বাবাজী, শ্রীমৎ স্বরূপ দাস বাবাজী, উজ্জ্বলানন্দ ব্রহ্মচারী, সম্মিলিত সনাতনী সমাজ বাংলাদেশের সমন্বয়ক স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, কাঞ্চন আচার্য্য, ডা. যীশুময় দেব, সুব্রত দাশ আকাশ, টিটু শীল, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব ধর তমাল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আফসার আহমেদ, উজ্জ্বল বরণ বিশ্বাস, বিপ্লব চৌধুরী বিল্লু প্রমুখ।

আট দফা দাবি গুলো হলো : সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রইব্যুনাল গঠন ও দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শান্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইন’ যথাযথ বাস্তবায়ন করা, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা রুম বরাদ্দ করা, সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন করা এবং শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটির ঘোষণা।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু সনাতনীদের ভাগ্যবদল হয় না। কোনো কিছু হলেই সনাতনীদের ওপর হামলা হয়। ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা মনে করেছিলাম একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা পাবো। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তী দেশের ৪৯টি জেলায় সনাতনীদের বাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৬৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরপরও বিভিন্ন স্থানে ঘটনা ঘটেছে। যদিও এ সংখ্যা আরও বেশি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বক্তারা আরও বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে সনাতনীরা আতংকিত। সুন্দরভাবে সনাতনীদের এই সর্ববৃহৎ উৎসব উদযাপনের জন্য বৃহত্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআদর্শ মানুষ গড়তে মহানবীর (দ.) আদর্শ অনুসরণের বিকল্প নেই
পরবর্তী নিবন্ধফিলিস্তিন কি জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হতে পারবে?