আট আসামির মৃত্যুদণ্ড

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

নগরীর আকবরশাহ বিশ্বকলোনীতে ৯ বছরের শিশু ফাতেমা আক্তার মীমকে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। প্রায় তিন বছর আগে সংগঠিত ওই অপরাধের সাথে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নিহত শিশুটির পরিবারের সদস্য ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। গতকাল সোমবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মো. জামিউল হায়দার ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় সাত আসামির উপস্থিতিতে রায় পড়ে শোনানো হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, মঈনুল ইসলাম মনু (৪৯), বেলাল হোসেন বিজয় (১৮), রবিউল ইসলাম রুবেল (১৯), হাসিবুল ইসলাম লিটন (২৬), আফসার মিয়া (১৮), মো. সুজন (২০), মেহেরাজ টুটুল (৩২) ও শাহাদাৎ হোসেন সৈকত (১৯)। এদের মধ্যে শাহাদাৎ হোসেন শুরু থেকেই পলাতক। রায়ে আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট এম এ নাসের আজাদীকে বলেন, আকবরশাহ থানার মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষ সমস্ত তথ্য ও সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন সাপেক্ষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণে সমর্থ হওয়ায় আদালত আসামিদের দোষী সব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। একই সাথে প্রত্যেক আসামিকে এক লক্ষ টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান এবং ওই টাকা শিশুটির পরিবারকে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলাটির চার্জ গঠনের পর এক বছর সাত মাসের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিচার শেষে গতকাল সোমববার এ রায় ঘোষণা করা হয়। এছাড়া একটি মামলায় একসাথে এতগুলো আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ঘটনা ট্রাইব্যুনালটিতে এটাই প্রথম বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
২০১৮ সালে ২১ জানুয়ারি বিকালে বাসা থেকে বেরিয়ে স্থানীয় মাঠে খেলতে যায় মীম। সন্ধ্যায় বাসায় না ফেরায় শিশুটির মা আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এক পর্যায়ে রাতে বিশ্বকলোনী এলাকায় মমতাজ ভিলা নামে একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভিকটিমের মৃত দেহ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমের লাশ উদ্ধার করে। পরদিন ২২ জানুয়ারি আকবরশাহ থানায় এ ঘটনায় নিহত শিশুর মা বিবি রাবেয়া বেগম অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
২০১৮ সালে ৯ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আকবর শাহ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (বর্তমানে ইপিজেড থানার ওসি) উৎপল বড়ুয়া ঘটনার সাথে ভবনটির কেয়ারটেকারসহ আট আসামির সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, সংশোধিত ৯(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়। এ সময় আদালতে পুলিশের হাতে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার সাত আসামির মধ্যে ৬ আসামির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এছাড়া মামলাটির শুরু থেকেই পলাতক ছিল শাহাদাৎ হোসেন। এর আগে মামলাটির তদন্ত করেন এসআই শফিউল আজম।
ট্রাইব্যুনালের পিপি এম এ নাসের বলেন, আদালতে পুলিশ কর্তৃক চার্জশীট দাখিলের পরে মামলাটি নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল মামলা (২০২৪/১৯) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৯ সালে ২৬ মে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচারকার্য শুরু হয়।
এ মামলায় মোট ২৯ জন সাক্ষী ছিলেন। দ্রুততম সময়ে আদালতে ১৯ জন সাক্ষীকে উপস্থাপনপূর্বক বিচারকার্য শেষ করে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষামান রাখা হয়েছিল বলে জানান তিনি। গতকাল সোমবার আদালতে দেয়া রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট বলে জানান ট্রাইব্যুনালের এ সরকারি কৌসুলী। এ মামলায় সাক্ষী হিসেবে ম্যাজিস্ট্রেট, চিকিৎসক, পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা যায়।
পুলিশের তদন্তে ও আসামিদের জবানবন্দিতে উঠে আসে, মমতাজ ভিলা নামে ওই ভবনে মেহেরাজ হোসেন মিরাজ নামে এক আসামির বাসা। ওই ভবনটির কেয়ারটেকারসহ অন্যান্য আসামিরা মিলে শিশুটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে মেয়েটিকে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পরে লোডশেডিং সুযোগ নিয়ে শিশুটির লাশ বাইরে সিঁড়িতে নিয়ে রাখা হয়। এ সময় লাশটি গুমের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে আসে।
জানা গেছে, বরিশাল শিবপুর থানার বানারী পাড়া গ্রামের বাসিন্দা জামালের মেয়ে মীম আকবর শাহ এলাকায় ফাতেমাতু জোহরা হেফজুল কোরআন মহিলা মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। নগরীতে তাদের পরিবার আকবরশাহ থানাধীন সি-ওয়াল্ড লেকসিটি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে। অন্যদিকে আসামিরা কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, রাঙামাটির বাসিন্দা। ঘটনার পর থেকেই পলাতক থাকা আসামি শাহাদাৎ হোসেন কুমিল্লা লাকসামের ঝউরতলা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতবুও মানে না মায়ের মন
পরবর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে তিন যুবকের মৃত্যুদণ্ড