চলতি বছরের ২০ জুলাই একযোগে সারা দেশে আটটি কেন্দ্রে ৯টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তখন ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে দেশব্যাপী কারফিউ থাকায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এরপর ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে অস্থির পরিস্থিতিতে পড়ে পুরো দেশ। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কর্তৃপক্ষ এখনো পরীক্ষার ব্যাপারে কিছু জানায়নি। যার কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। কৃষি গুচ্ছের মধ্যে রয়েছে দেশের ৯টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়–ময়মনসিংহ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়–গাজীপুর, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়–ঢাকা, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
জানা যায়, গত জুলাই মাসের আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিজ্ঞান গুচ্ছ এবং প্রকৌশল গুচ্ছের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার পর ভর্তি কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়েছে। জুলাই মাসের আগে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু কৃষি গুচ্ছের ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আটকে আছে। দীর্ঘদিন পরীক্ষা আটকে থাকায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। এছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা যথাসময়ে শেষ করলেও কৃষি গুচ্ছের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে অনেক দেরিতে। এ নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
অভিভাবকরা জানান, আরও দুই তিন মাস আগে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনেকগুলোতে ক্লাসও শুরু হয়েছে। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। কৃষি গুচ্ছভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নতুন উপাচার্য নিয়োগ এবং ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তারা বলছেন, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষাই এখনো শুরু হয়নি। পরীক্ষা কখন হবে সেটিও জানানো হচ্ছে না। সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, দ্রুত সময়ে যেন পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।
কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষাটি ৮টি কেন্দ্রে হওয়ার কথা রয়েছে। কেন্দ্রগুলো হল চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
এবার কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্বে আছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)। সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. এএসএম লুৎফুল আহসান কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন। এই ব্যাপারে প্রফেসর ড. এএসএম লুৎফুল আহসান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আমরা ভর্তি পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করবো। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ করছি। আমরা দ্রুত পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করবো। দেশের রাজনৈতিক ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে কৃষি গুচ্ছের এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান তিনি।