বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’তে রূপ নিয়ে আজ বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ স্থলভাগ অতিক্রম করতে পারে। গতকাল রাত দেড়টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, এটি আরো শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। রাতের মধ্যেই এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘মিধিলি’। নামটি মালদ্বীপের দেওয়া। মোংলা–পটুয়াখালী উপকূল দিয়ে এটি স্থলভাগ অতিক্রম করতে পারে বলা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রামসহ সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। অপরদিকে এর প্রভাব কেটে গেলে দেশে শীত অনুভূত হতে পারে বলে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বাস্তবায়ন বোর্ডের সভা শেষে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এ ঘূর্ণিঝড়ের হালনাগাদ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এটি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১১টি জেলায় আঘাত হানার শঙ্কা রয়েছে। জেলাগুলো হলো, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম। । তিনি বলেন, যেহেতু এখন পূর্ণিমা নেই এবং বাতাসের গতিবেগও কম, সেজন্য জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কাও অনেক কম। আবহাওয়া দপ্তর থেকে বিপদসংকেত দেওয়া হবে। সেটি সাত মাত্রায় উঠলেই যেন দ্রুততার সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার ও নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা রাখতেও নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলেও এটা হবে খুবই দুর্বল ঘূর্ণিঝড়। বাতাসের গতিবেগ ৫০–৭০ কিলোমিটারের মাঝেও থাকবে কি না, সন্দেহ আছে। ঘূর্ণিঝড় হিসেবে সৃষ্টি হতে না হতে এটি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। কারণ ইতোমধ্যে মেঘ চলে আসছে।’
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
নিম্নচাপের প্রভাবে বুধবার মধ্যরাত থেকে চট্টগ্রামে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়। গতকাল সকাল থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি পায়। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, এই গভীর নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যে বৃষ্টি হচ্ছে, তা সারাদেশে শীত নামিয়ে আনবে। ভৌগোলিক কারণে শীত আসার আগে এরকম দুই একটা নিম্নচাপ সাধারণত প্রতিবছরই তৈরি হয় উল্লেখ করে আবহাওয়াবিদেরা জানান, এই সময়ে সূর্যটা আস্তে আস্তে দক্ষিণ দিকে চলে যায়। তখন সমুদ্র উত্তপ্ত হয় এবং নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। তখন মেঘ আসে এবং বৃষ্টি হয়। আর বৃষ্টি হলে মেঘ কেটে যায়, আকাশ পরিস্কার হয়ে যায়। তারা বলেন, আসলে শীতের পূর্বশর্তই হল আকাশ ক্লিয়ার থাকতে হবে। সে হিসেবে বলা যায়, এই বৃষ্টির পর হালকা শীত শীত অনুভূত হতে পারে। এই নিম্নচাপটা কেটে যাওয়ার পর দুই–চারদিনের ব্যবধানে আবারও বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে।