একমাস আগে যখন পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল টাইগাররা, তখন দেশটির বিপক্ষে কখনোই টেস্ট জেতা হয়নি। আজ যখন ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামছে, তখনো একই পরিসংখ্যান। দুই দলের ১৩ দেখায় জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। ভারত জিতেছে ১১টি ম্যাচ। যে দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছে তাও বৃষ্টির কল্যাণে। তাই আজ বাংলাদেশের সামনে যেন নতুন যুগের সূচনা করার মিশন।
রোহিত শর্মার দল ভারত টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বের এক নম্বর। বিশ্বের বাঘা বাঘা দলও খড় খুটোর মত উড়ে যায় তাদের সামনে। সেখানে বাংলাদেশ আর কী প্রতিপক্ষ। তারপরও নতুন কিছু করার প্রত্যয়ে আজ চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে দুই টেস্টের সিরিজের প্রথম টেস্টে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। টেস্টটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় আজ সকাল ১০টায়। পাকিস্তানকে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। যা দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা জয়ের কীর্তি হিসেবে ভাবা হচ্ছে। পাকিস্তানের চেয়ে স্বাগতিক ভারত অনেক বেশি শক্তিশালী হলেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারফরমেন্সে ধারাবাহিক হতে চায় টাইগাররা।
বাংলাদেশের বর্তমান টেস্ট দলটিকে অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ দল হিসেবে দেখা হচ্ছে । যে কোন দেশের বিপক্ষে বিশ্বের যে কোন কন্ডিশনে পারফরমেন্স করতে পারে তারা। যদিও দলে সাকিব আল হাসান এবং মেহেদি হাসান মিরাজের মতো দুজন স্বীকৃত অলরাউন্ডার আছে। তাদের জন্যই একাদশে দুজন করে অতিরিক্ত বোলার এবং ব্যাটার নিতে পারে টাইগাররা। তবে এই মুহূর্তে দলের পেস আক্রমণের দুর্দান্ত পারফরমেন্স সবাইকে অবাক করছে। পাকিস্তান সিরিজে নিজের গতির প্রমাণ দিয়েছেন তরুণ সেনসেশন নাহিদ রানা। তার সাথে পেস আক্রমণে আছেন তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, সৈয়দ খালেদ আহমেদ। গত দুই বছরে প্রতিপক্ষকে ধসিয়ে দিতে নিজেদের পারদর্শিতা দেখিয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররা। পাকিস্তানের পর ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ দল। তবে ভুলে গেলে চলবে না–ভারত বিশ্বের এক নম্বর দল। দলটিতে বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিশ্বসেরা অনেক বোলার। পেস কিংবা স্পিন দুই বিভাগেই সামন পারদর্শী ভারত। কাজেই ভারতকে বধ করতে হলে নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে বলে মনে করছেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
বাংলাদেশের এই টেস্ট দলকে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তবে তিনি যে মোটেও বাড়িয়ে বলেননি তার প্রমাণ মেলে যখন হার্শা ভোগলে, আকাশ চোপড়ার মত ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাও বাংলাদেশের শক্তি ও সম্ভাবনা সম্পর্কে ভারতকে সতর্ক করেন।
সর্বশেষ দুই ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করেছিলো টিম ইন্ডিয়া। এ সিরিজের দুই ম্যাচই ইনিংস ব্যবধানে এবং আড়াই দিনের মধ্যে জিতেছিলো ভারত। দুই বছর আগে ঘরের মাঠে সর্বশেষ দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ভারতের কাছে হেরেছিলো বাংলাদেশ। শেষ টেস্টের পঞ্চম দিন জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটে হেরেছিল টাইগাররা। তবে অনেকেই মনে করছেন বাংলাদেশ আর সেই দল নেই যা পাঁচ বছর আগে ছিল। তাইতো এবারের সফরে যদি কোন টেস্ট পঞ্চম দিনে টেনে নেওয়া যায় তাহলে দলের ম্যাচ জয়ের সুযোগ থাকবে বলে জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। গতকাল সাংবাদিকদের শান্ত বলেন টেস্ট জিততে হলে আপনাকে পাঁচ দিন ভালো খেলতে হবে। আমাদের লক্ষ্য পাঁচ দিন ভালো খেলা। আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি কোন টেস্ট পঞ্চম দিনে নিয়ে যেতে পারি তাহলে জয়ের সুযোগ থাকবে। তবে এই সিরিজ তাদের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং সিরিজ হতে চলেছে বলেও মন্তব্য করেন শান্ত। এজন্য আমরা সর্তক। পাকিস্তানে ভালো একটি সিরিজ শেষ করার পর আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। দলের মধ্যে সবাই অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং বিশ্বাস করি আমরা ভারতকে হারাতে পারি। প্রতিটি সিরিজেই সুযোগ আছে। দুই ম্যাচে জেতার জন্যই আমরা খেলবো।
পাকিস্তান সিরিজ থেকে মাত্র ১টি পরিবর্তন এনে ভারত সিরিজের স্কোয়াড সাজিয়েছে বাংলাদেশ। পেসার শরিফুল ইসলামের জায়গায় জাকের আলী অনিককে নেওয়া হয়েছে। ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে যান শরিফুল। তবে মাঠের লড়াই কতটা করতে পারে বাংলাদেশ সেটাই এখন দেখার বিষয়।