আজ মাহান স্বাধীনতা দিবস আমাদের অঙ্গীকারের দিন

| বুধবার , ২৬ মার্চ, ২০২৫ at ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ

আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালির শৃঙ্খল মুক্তির দিন। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের এক মহান দিন। এই দিনটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক দুঃখকষ্টবেদনা, রয়েছে অনেক উচ্ছ্বাস, আবেগ, অনুভূতি আর আনন্দবেদনার মিশ্রণ।

১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। যে যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকেই। অনেকেই হারিয়েছেন তাঁদের মূল্যবান সহায়সম্পদ। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা বাঙালির ওপরে যে অত্যাচার করেছিল, তা বর্ণনাতীত। অনেক ত্যাগতিতিক্ষার বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম নিল নতুন রাষ্ট্র, নতুন মানচিত্র ‘বাংলাদেশ’। তাই ১৯৭১ সাল বাঙালির জাতীয় জীবনে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। অনেক ত্যাগ, অনেক সংগ্রাম, অনেক রক্তের বিনিময়ে এসেছে এ স্বাধীনতা। সেজন্য এদেশের বীর যোদ্ধা যারা দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করেছেন, সম্ভ্রম হারিয়েছেন, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন সেই বীর সূর্য সৈনিকদের জানাই অজগ্র সালাম আর শ্রদ্ধা।

বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনসার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। স্বাধীনতা অর্জনের এতো বছর পর আমাদের ভাবতেই হবে, যাঁরা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, দেশের জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁরা যে সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সে রকম সমাজ কি আমরা গড়তে পেরেছি? আমরা কি বৈষম্যহীন ও মর্যাদাপূর্ণ এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে পেরেছি, যেখানে দুঃখী মানুষদের দুঃখ মোচন হবে। আমরা লক্ষ্য করছি, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের নিম্নবিত্ত মানুষ খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছে। মধ্যবিত্তদের আর্থিক অবস্থাও করুণ হচ্ছে। এই সব সাধারণ মানুষের ক্ষুধা ও আশ্রয়ের কথা আমাদের ভাবতে হবে। যে অর্থনৈতিক বঞ্চনা প্রতিকারে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সে কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো বাংলাদেশ দেখেনি। যে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের মাধ্যমে আমাদের পেটে অন্ন আসে, দেশের শিল্পকারখানা সচল থাকে, সে কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য পান না। দেশে বেকারত্ব বাড়ছে, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। আমরা এখনও সে রকম কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হবে। মুক্তিযুদ্ধের গভীরে ছিল স্বাধীনতা, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়ের প্রতি অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকারে উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য একতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। এখন আমাদের ভাবতে হবে, এই একতা আমরা কতটা অর্জন করতে পারলাম! রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতেই আমাদের বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি গড়ে তুলতে হবে।

মহাকবি মিল্টন বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা মানুষের প্রথম এবং মহান একটি অধিকার’। কিন্তু স্বাধীনতাকে ফলপ্রসূ ও অর্থবহ করতে হলে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক সমাজের আবশ্যকতা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। স্বাধীনতার চেতনার একটি ছিল বৈষম্যের অবসান। তদানীন্তন শাসকচক্র আমাদের সরকারি দায়িত্বপূর্ণ পদ ও কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন করেছে শুরু থেকেই। তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ, অবিচার, নির্যাতননিপীড়ন, শোষণ ও বঞ্চনার ফলে আমরা নিজেদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করতে বাধ্য হয়েছিলাম। ফলে পূর্ব পাকিস্তানিদের মধ্যে একটা গণঅসন্তুষ্টির সৃষ্টি হয়। এতে মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতা অনিবার্য হয়ে ওঠে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলেন, শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তিই আমাদের স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার। দারিদ্র্যের বলয় ভেঙে সেই মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাধারণ মানুষের মুক্তিই আসল কথা। খেটে খাওয়া, শ্রমজীবী মানুষের দারিদ্র্যের বলয় ভেঙে অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণা প্রতিটি মানুষের মুক্তি। সমতাভিত্তিক সমাজ সৃষ্টি করা গেলে, সেখানে কোনও বৈষম্য থাকবে না। প্রতিটি মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হবেএটিই স্বাধীনতার মূল জায়গা। আমরা অসামপ্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের সমাজে বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক আলোড়ন এবং জাগরণ দরকার।

লাখ লাখ শহীদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জিত স্বাধীনতাকে আরো অর্থবহ করে তুলতে হবে। স্বাধীনতা দিবস আমাদের অঙ্গীকার করার দিন, আমাদের শপথের দিন। যে শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার। একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে