আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাবেন গণঅভ্যুত্থানে আহতরা

সচিবালয়ে উপদেষ্টাদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বৈঠক আহতদের নিয়ে কাজ করা রাজনৈতিক দলগুলোর কর্তব্য : নাহিদ

| শুক্রবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২৪ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

গণ আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় আর কোনো ঘাটতি থাকবে না, অবহেলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো পাঁচ দিনের মধ্যে প্রকাশের সিদ্ধান্ত এসেছে সুচিকিৎসার দাবিতে বিক্ষোভে নামা ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আহতদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসা বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জুলাইআগস্ট গণ আন্দোলনে আহতদের পাশে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, আহতদের কার কোন দেশে চিকিৎসা নিলে ভালো উপশম আসবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আহতদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আজকে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল তা আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত আকারে প্রকাশ করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্বল্পমেয়াদী উদ্যোগগুলো দৃশ্যমান হবে। আমলাতান্ত্রিক স্থবিরতা থাকবে না। এ বিষয়ে কোনো গাফিলতি সহ্য করা হবে না। চিকিৎসা সেবা কিংবা অর্থপ্রাপ্তি যেকোনো ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে, জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, জুলাইআগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত রোগীদের তালিকা করে প্রত্যেক রোগীকে একটি ইউনিক আইডি কার্ড দেওয়া হবে। সেই কার্ড দেখিয়ে তারা দেশের সরকারি হাসপাতাল থেকে আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে পারবেন। খবর বিডিনিউজের। এসময় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আহতদের মধ্যে এক ধরনের ট্রমা আছে, অনাস্থা আছে। কিন্তু আমরা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেকগুলো সমস্যা এক সাথে মোকাবেলা করতে হয়েছে। আজকে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে এগুলো আগেই ঠিক করা হয়েছিল। এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে আহতদের চিকিৎসায় একটা রূপরেখা দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।

চিকিৎসা নিয়ে অবহেলা ও অন্যান্য ক্ষোভ জানাতে বুধবার দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের সামনে শ্যামলীআগারগাঁও সড়ক অবরোধ করে রাখে কোটা সংস্কার ও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় আন্দোলনে আহতরা। তারা সমন্বয়ক থেকে অন্তর্র্বর্তী সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ও সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সাক্ষাৎ না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরে গভীর রাতে সরকারের পাঁচজন উপদেষ্টা বিক্ষোভ স্থলে গিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে তাদেরকে শান্ত করে হাসপাতালে ফিরিয়ে আনেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আহতদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, যা সাড়ে ৫টায় শেষ হয়।

আহতদের রাস্তায় নামতে হলো কেন? আপনাদের সঙ্গে কি সমন্বয়ের অভাব ছিল? সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে। উত্তরে তিনি বলেন, এটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু আহত এবং যারা শহীদ তারা কিন্তু শুধু সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত না। তারা রাষ্ট্র ও জাতির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাদের শ্রদ্ধা, সম্মান করা এদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকে কর্তব্য। বর্তমান সরকারের দিক থেকে সেটা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজনৈতিক আলাপে ও মিডিয়ায় তাদের কথাবার্তা কিন্তু কম ফোকাস করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে কোনো সরকারের নির্দেশনার বিষয় ছিল না। শহীদ ও আহতদের নিয়ে কাজ করা রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্তব্য। সর্বোপরি এটা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। এই কর্তব্যে যেন কেউ অবহেলা না করি। বর্তমান সরকারই তাদের সুযোগ সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে পারবে। এই বিশ্বাস আমাদের সকলের আছে। সেই জিনিসটা তারা বার বার চাচ্ছে। কারণ, নির্বাচন বলে রাজনৈতিক আলাপ আনা হয়, যেটা সকলের ভেতর এক ধরনের অনাস্থা তৈরি করছে।

এদিন বেলা ২টার কিছু সময় পর পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আসেন ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল ও চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আহতরা। এর বাইরে অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আহতরাও চলে আসায় তাতে বাঁধ সাধেন আগের রাতের বিক্ষুব্ধরা। সভায় ক্ষোভ ও অনুযোগ জানাতে সচিবালয়ে এসে নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েন তারা। বিকাল ৪টায় দেখা যায়, একপক্ষ বিক্ষুব্ধ হয়ে হলরুম ত্যাগ করেছেন। সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম বারবার চেষ্টা করেও তাদের শান্ত করতে পারছেন না।

আলোচনায় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, শারমিন এস মুরশিদ, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সমন্বয়ক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুলাই-অগাস্টের গণহত্যা নিয়ে ভারত এখনও চুপ : নাহিদ
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা