আজি নবান্ন উৎসবে…

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

আজি নবান্ন উৎসবে নবীন গানে, আয়রে সবে আয়রে ছুটে প্রাণের টানে’ এই স্লোগানে সম্পন্ন হলো নবান্ন উৎসব। নগরে গতকাল শুক্রবার অষ্টমবারের মতো এই উৎসবের আয়োজন করে শিশুমেলা। বিকালে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে সর্বস্তরের সংস্কৃতিপ্রেমীরা এনায়েত বাজার মহিলা কলেজে উৎসব প্রাঙ্গণে জড়ো হন। শিবু জলদাসের ঢোল বাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব।

উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যারা ভাষার জন্য প্রাণ দেন তাঁদের নিয়ে প্রথম কবিতা লেখা হয়েছিল এই চট্টগ্রামে। সেদিন রাষ্ট্রদ্রোহিতা জেনেও আমার বাবা তা ছাপান। সেই সাহস তাঁরা দেখিয়েছিলেন বলেই আজ আমরা বাংলায় কথা বলি। আমাদের নতুন প্রজন্মকে সেই ইতিহাস জানতে হবে। প্রকৃতিকে চিনতে হবে। পণ্ডিত রবিশঙ্কর এক শিশুকে লিখে দিয়েছিলেন, বড় হও, তবে নিষ্কুলষতা হারিও না। জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো চরিত্র ও সময়। সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য কখনো অপেক্ষা করে না। তোমরা যারা শিশুকিশোর তারা সবাই অনেক বড় হবেএটাই আমার আশা। সবসময় মাবাবা আর শিক্ষকের কথা শুনবে। এ তিনজন তোমাদের কাছে কখনো কিছু চায় না। শুধু চায় শ্রদ্ধা। কখনো তাঁদের অশ্রদ্ধা করবে না। পরিবারকে ভালো রাখবে। সবাই একসাথে ভালো থাকবপরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে এটাই আমাদের স্বপ্ন। যতদিন বেঁচে থাকব এই লালসবুজ পতাকা আমার সাথে থাকবে। বিদায়ের দিনও থাকবে। এটাই আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পাওনা।

তিনি বলেন, দৈনিক আজাদী একমাত্র পত্রিকা, যার সম্পাদক মোহাম্মদ খালেদ স্বাধীনতা যুদ্ধে ও সংবিধান প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি স্বাধীনতা পদক পান। আর আমি পেয়েছি একুশে পদক। এর চেয়ে বড় পাওনা আর কিছু হয় না। তোমরা শিশুরা ভালো থাকবে, সুন্দর থাকবে। শিশুমেলা নিয়মিত শিশুকিশোরদের নিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন করে, যা বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশের জন্য প্রয়োজন। এমন আয়োজন অব্যাহত থাকুক।

নবান্ন উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ সকল ইতিহাসে সাহসী ভূমিকা রেখেছে। নবান্ন উৎসব আমাদের জাতীয় উৎসব। সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষের উৎসব। আমরা শৈশবে নবান্ন উৎসবে সামিল হতাম। আজকের শিশুরা এ উৎসব থেকে বঞ্চিত। হয়ত কোনোদিন আবার জাতীয়ভাবে নবান্ন উৎসব হবে। এই শহরে অনেক সাংস্কৃতিক আয়োজন হয়। এই ডিসি হিল নিয়ে অনেক ঝামেলা চলছে। অথচ সরকার এখানে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সেটা আলোর মুখ দেখেনি। আমাদের ইতিহাসঐতিহ্য যেন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ডিসি হিল চট্টগ্রামবাসীর জন্য উন্মুক্ত করা হোকএই দাবি জানাই। শিশুরা আজ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে খেলার সুযোগের অভাবে। আমরা অনেকভাবে বঞ্চিত। এসব বঞ্চনার অবসান চাই।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক শিল্পী জয়ন্তী লালা বলেন, শিশুমেলা চিরায়ত বাংলার নবান্ন উৎসবের আয়োজন করে প্রতি বছর। এমন উৎসব শিশুদের বাঙালি সংস্কৃতির সাথে পরিচয় ঘটাবে।

নবান্ন উৎসব উদযাপন পরিষদের কোচেয়ারম্যান কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, আমাদের বয়স বাড়ছে। নবীনরা বেড়ে উঠছে। তাদের আমরা কিছু দিয়ে যেতে চাই। জামালখান ওয়ার্ড একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা। এখানে শিল্প, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নিয়েছি। সকল উদ্যোগে দৈনিক আজাদী সম্পাদক শ্রদ্ধেয় এম এ মালেককে পাশে পেয়েছি।

আবৃত্তিশিল্পী আয়েশা হক শিমুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শিশুমেলার পরিচালক রুবেল দাশ প্রিন্স। উপস্থিত ছিলেন উৎসব উদযাপন পরিষদের কোচেয়ারম্যান শরীফ চৌহান, সদস্য সচিব প্রণব বল ও সমন্বয়ক শফীক আহমেদ সাজীব।

প্রীতম ভট্টাচার্যের গানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে হিল্লোল দাশ সুমনের পরিচালনায় সুরাঙ্গন ডান্স একাডেমি, তন্ময় বড়ুয়ার পরিচালনায় নৃত্য রং একাডেমি, রিয়া দাশ চায়নার পরিচালনায় নৃত্য নিকেতন চট্টগ্রাম ও নৃত্য নাট্য শাশ্রম।

সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সনজিত আচার্য্য, গীতা আচার্য্য, শিমুল শীল, এস এম মানিক, ইকবাল পিন্টু, স্বর্ণালী আক্তার, অঙ্কিতা আচার্য্য, প্রীতি দাশ, প্রদীপ মজুমদার, বিজয় নাথ প্রমুখ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন দীপশিখা খেলাঘর আসরের শিল্পীরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅক্সিজেন মোড়ে হাসপাতালে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে দিনভর বৃষ্টি, সেন্টমার্টিনে আটকা দুই শতাধিক পর্যটক