আজ ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ দৈনিক আজাদী পূর্ণ করেছে প্রতিষ্ঠার ৬৪ বছর। পদার্পণ করলো গৌরবের ৬৫ বছরে। এটি বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে একটি স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, হকার ও শুভানুধ্যায়ীকে জানাই শুভেচ্ছো। সবার প্রতি থাকলো আমাদের ভালোবাসা। দৈনিক আজাদীকে বলা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র। কিন্তু তার জন্ম বাংলাদেশের জন্মের ১১ বছর ৩ মাস ১১ দিন আগে, অর্থাৎ ১৯৬০ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর। এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় লাভের পর ১৭ ডিসেম্বর সকালে প্রথম প্রকাশিত হয় দৈনিক আজাদী। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘নিরীক্ষা’ সেপ্টেম্বর–ডিসেম্বর ১৯৯৯ সংখ্যায় ‘স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী’ শীর্ষক একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেখানে তাঁরা আজাদীকে এই স্বীকৃতিটা দিতে কার্পণ্য করেননি। এজন্য প্রেস ইনস্টিটিউটকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়।
দৈনিক আজাদী চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের সংবাদপত্র। সুদীর্ঘ সময় ধরে অবহেলিত চট্টগ্রামের দুঃখ–হাহাকার–সংকট আর সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে ধরতে এটি পরিণত হয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের ভালোবাসার মুখপত্রে। চট্টগ্রামের জনমানুষের কথা বলার জন্য– সর্বোপরি বঞ্চিত ও অবহেলিত জনপদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার লক্ষ্য নিয়ে ৬৪ বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল দৈনিক আজাদী। আজাদী আজ শুধু একটি সংবাদপত্রই নয়, এটি এখন চট্টগ্রামের আয়না হিসেবেও স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক যখন ৬৪ বছর আগে এ ধরনের একটি কাগজের কথা চিন্তা করেন তখন আসলে দৈনিক সংবাদপত্র এখানে ছিল এক ধরনের কুটির শিল্পের মতো। ছোট্ট ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগুলো প্রকাশিত হতো। সেখানে তিনি যে প্রতিষ্ঠান হিসেবে কল্পনা করেছেন তাকে বলা যায় যে, তিনি এক ধরনের দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন এবং একজন অগ্রনায়কের কাজ করেছেন। পত্রিকাটা যে ৬৪ বছর ধরে টিকে আছে, ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, তাতে একভাবে বলা যায় যে, তার স্বপ্ন সফল হয়েছে। ‘আজাদী’ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত মূলত আঞ্চলিক পত্রিকা এবং চট্টগ্রাম যেহেতু বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান নগরী, বন্দরনগরী – ফলে চট্টগ্রামের দেশব্যাপী একটা প্রভাব আছে, ভূমিকা আছে। চট্টগ্রামের জনগণের মুখপত্র হিসেবে ভূমিকা পালনের বিষয়টি আমাদের মনে হয় দেশবাসীও স্বীকার করেন, চট্টগ্রামবাসী তো অবশ্যই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘আজাদী’র একটা চরিত্র আছে যেটা সব সময় যেন, সাধারণ মানুষের চেহারা নিয়ে বেরিয়েছে, এটার মধ্যে কোনো জাঁকজমক ছিল না, এটার মধ্যে খুব একটা বহিরঙ্গকে অতি সুদৃশ্য মোড়কে মোলানোর ব্যাপারটা ছিল না। এটা ছিল একটা সাধারণ মানুষ যেন নিজের আপন কাগজ বলে মনে করতে পারে। সেই হিসেবে আমরা বলব যে, ‘আজাদী’ তার চরিত্রটা আগাগোড়াই বজায় রেখেছে এবং সেইভাবে তার একটা সীমিত পরিসরের মধ্যেও তার ভূমিকাটা সঠিকভাবে পালন করেছে। তাঁরা বলেন, ঐতিহ্যের মাধ্যম দিয়ে অর্জিত ঐশ্বর্য সামাজিকতার অংশ, সংস্কৃতির অংশ, ইতিহাসের অংশ। ঐতিহ্যের চর্চায় ঐশ্বর্য বিকশিত হয়। চট্টগ্রাম প্রাচীন ঐতিহ্য ও ঐশ্বর্যের ভাণ্ডার। এই ভাণ্ডার এর সাথে সম্পৃক্ত পাঠকপ্রিয় আজাদী এই অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্য আর ঐশ্বর্যের অনুপম গোলাঘর। বস্তুগত আর মনস্তাত্ত্বিক ঐশ্বর্য ভিন্ন দর্শনের। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দৈনিক আজাদী একই সাথে মনস্তাত্ত্বিক এবং বস্তুগত ঐতিহ্যের ঐশ্বর্য। সামাজিকতার, সংস্কৃতির সচল ভাণ্ডার এই প্রকাশনাটি। ঐতিহ্যকে ধারণ করে ইতিহাসের সাথে পথচলে, সংস্কৃতি ও সামাজিকতাকে চর্চা করে মানুষের মননশীলতাকে সৃজনশীল প্রীতি ও সোহাগে লালন করে এ অঞ্চলসহ সারা দেশের পাঠক–সৌখিন মানুষকে, তাদের মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন–সাধন করে নিরন্তর পথচলা এই পত্রিকাটি দৈনিক আজাদী।
বলা যায়, আজাদী চট্টগ্রামের মানুষের কাছে ভালোবাসার অনন্য আবাসস্থল হিসাবে মনে জায়গা করে নিয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষ যারা দেশের বাইরে অবস্থান করছে তারা অনলাইনের মাধ্যমে তাদের প্রিয় পত্রিকায় চোখ রাখার সুযোগ হচ্ছে। দৈনিক আজাদীর অনলাইন সুবিধা আজাদীপ্রেমী প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে দেশের খবরের স্বাদ গ্রহণেরও অনন্য সুযোগ বলা চলে।
‘আজাদী’ আজ কেবল একটা মিডিয়া নয়, এটা বর্তমানে একটা আন্দোলন। এই আন্দোলন হিসাবেই ‘আজাদী’ এই অঞ্চলের মানুষকে নানা সময়ে সংগঠিত করে। যা দেশের জন্য ইতিবাচক। বর্তমান সময়ে প্রয়োজন মানুষের মনে একটা গুণবাচক ও ইতিবাচক ভাবনা তৈরি করা। এই ক্ষেত্রে ‘আজাদী’র একটা বিশাল ভূমিকা আছে। আর এটিই হোক ‘আজাদী’র অনুপ্রেরণা। উল্লেখ্য, সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক দেওয়া হয়েছিল আজাদীকে। আজাদীকে দিয়েই এই উদ্যোগ শুরু। প্রগতিশীল এই পত্রিকাটির মূলধন পাঠকসমাজ। এই পাঠক সমাজই আজাদীকে বাঁচিয়ে রাখবে।