আজাদী ও ইতিহাসের এক দুর্লভ দলিল

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৭ অক্টোবর, ২০২০ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীনতা-পূর্ব কালের উত্তাল দিনগুলোয় প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দুর্লভ একটি কপি সাংবাদিক ওসমান গনি মনসুর হস্তান্তর করলেন আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের হাতে। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিলাভ উপলক্ষে দৈনিক আজাদী টেলিগ্রাম (বিশেষ সংখ্যা) প্রকাশ করেছিল। অর্ধশতাব্দিকাল আগের দৈনিক আজাদীর সেই কপিটি সাংবাদিক ওসমান গনি মনসুর নিজের সংগ্রহে রেখেছিলেন। বহুদিন আগের পত্রিকার সেই কপিতে স্বাধীনতা-পূর্ব কালের উত্তাল দিনগুলোর চিত্র ফুটে উঠেছে। সেই দুঃসময়েও দৈনিক আজাদী ছিল গণমুখী পত্রিকা, গণমানুষের পত্রিকা। ছিল বাঙালির অবিসংবাদিত নেতার পক্ষে, স্বাধীনতাকামী মানুষের পক্ষে।
১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ‘মুজিবরের’ (তখনো উনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হননি। এর একদিন পর ২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঢাকায় তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে, বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো মানুষের এক সমাবেশে তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করে) মুক্তিতে ‘ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনের মুখে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি লাভ, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার’ – ব্যানার শিরোনামে টেলিগ্রাম প্রকাশ করে দৈনিক আজাদী।
এর মাধ্যমে পাকিস্তানী শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করার সাহস দেখিয়েছিল আজাদী। বাংলার মাটি এবং মানুষের স্বার্থে আপোষ না করা দৈনিক আজাদীর ওই বিশেষ সংখ্যায় ‘চট্টগ্রামে খুশীর হিল্লোল’ শিরোনামে আলাদা একটি সংবাদও ছাপা হয়। তৎকালীন পরিস্থিতিতে এই ধরনের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ এবং তাতে ব্যানার হেডলাইনে মুজিবের মুক্তির জয়গানের সাথে খুশীর হিল্লোল বইয়ে দেয়ার খবর ছাপানো যে কত সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল তা আজ কল্পনা করাও কঠিন। এভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে দৈনিক আজাদী অনন্য ভূমিকা রাখে । এরই ধারাবাহিকতায় দেশের লাল সবুজ পতাকা, স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভোরে স্বাধীনতা অর্জনের খবর জানিয়ে দৈনিক আজাদী ব্যানার হেডলাইন করেছিল ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’। আজাদীর আগে স্বাধীনতা লাভের এই খবর আর কোনো পত্রিকা প্রকাশ করতে পারেনি। ঢাকার পত্রিকা ১৭ ডিসেম্বর বিকেলে খবরটি ছাপিয়েছিল। আর এতে করে দৈনিক আজাদী বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হয়ে যায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র হিসাবে।
দৈনিক আজাদীর এই ধরনের একটি দুর্লভ সংখ্যা আমাদের হাতে পৌঁছে দেয়ার জন্য আমরা সাংবাদিক ওসমান গনি মনসুরকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সম্মানিত পাঠকদের সংরক্ষণের সুবিধার্থে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারির পত্রিকার কপিটি হুবহু সাইজে তৃতীয় পৃষ্ঠায় আজ ছাপানো হলো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গা ক্যাম্পে এবার চার লাশ
পরবর্তী নিবন্ধবন্দরে চোর সন্দেহে পিটুনিতে একজনের মৃত্যু