‘আজাদী’ শব্দের অর্থ মুক্তি; আর মুক্তি বরাবরই সৃজনশীলতার পথ প্রসারিত করে। আজ ‘দৈনিক আজাদী’র ৬৫ তম বর্ষপূতি, ৬৬তম বর্ষে পদার্পণ। ১৯৬০ সালে কোহিনুর প্রেসের স্বত্বাধিকারী ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক যখন দৈনিক আজাদী প্রকাশের উদ্যোগ নেন তখন ভাগিনা অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদকেও সাথে নেন তিনি। দুই বছর চলার পর হঠাৎ ইঞ্জিনিয়ার আবুদল খালেক মৃত্যুবরণ করলে ভাগিনা অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ দৈনিক আজাদীর হাল ধরেন। সেই যে হাল ধরেছিলেন আমৃত্যু আর ছাড়েন নি। একটানা ৪০ বছর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, কিংবদন্তী সাংবাদিক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। আমার জানামতে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ এখন পর্যন্ত একমাত্র ব্যক্তি যিনি সুদীর্ঘ ৪১ বছর একটি পত্রিকার একটানা সম্পাদক ছিলেন। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে যে কয়েকটি পত্রিকা প্রকাশিত হয় তার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় পত্রিকা আমার ‘দৈনিক আজাদী’। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আমার ‘দৈনিক আজাদী’ পত্রিকা পড়া চাই। দৈনিক আজাদী পত্রিকার মাধ্যমে আমার লেখালেখি শুরু। কবি, প্রাবন্ধিক, লেখক রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত বরেণ্য লেখক সৃষ্টিতে পত্রিকাটির ভূমিকা অপরিসীম। চট্টগ্রামের সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও ব্যবসা বাণিজ্যের বিকাশ ঘটাতে ‘দৈনিক আজাদী’ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিদিন আজাদী সময়োপযোগী ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করে আসছে। দৈনিক আজাদী আজ গণমানুষের নির্ভরতার প্রতীক। বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের প্রতি মুহূর্তের সংবাদগুলো সংগ্রহ করার এবং সেই সংবাদগুলো পত্রিকায় প্রকাশের ক্ষেত্রে আজাদী পত্রিকার বিকল্প নেই। আজাদী চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকা হলেও তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে বর্তমানে অনলাইনেও ই–পেপার ভার্সনে পুরো বিশ্বের পাঠকেরা নিয়মিত পত্রিকাটি পড়তে পারছেন। আজাদী হয়ে উঠেছে প্রতিদিনকার ভোরবেলার অন্যতম অনুষঙ্গ। দৈনিক আজাদী অর্জন করেছে ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পুরস্কার –২০১৯’। ‘৬০ বছরের দৈনিক আজাদী সংকলন’ – দৈনিক আজাদীর ইতিহাসে আরো একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দৈনিক আজাদী বাংলাদেশের একমাত্র পত্রিকা যে পত্রিকার তিনজন নক্ষত্র রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ তিন ক্যাটাগরির পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০১৯ সালে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা পুরস্কার পান মরণোত্তর, ২০২২ সালে সাংবাদিকতায় একুশে পদক পান আজাদীর বর্তমান সম্পাদক এম.এ. মালেক। তার আগে ২০১৬ সালে আজাদীর সহযোগী সম্পাদক কবি শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ লাভ করেন শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার। এই পুরস্কারগুলো আজাদীর জন্য মাইলফলক এবং চট্টগ্রামবাসীর জন্য প্রেরণার উৎস। বিশেষজ্ঞরা যথার্থই বলেছেন – ‘আজাদী আজ শুধু একটি সংবাদপত্রই নয়। এটি এখন চট্টগ্রামের আয়না হিসেবেও স্বীকৃতি অর্জন করেছে’। সরকারি, বেসরকারি ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মকাণ্ডের সুন্দর উপস্থাপনায় আজাদীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। ভালো লাগে সম্পাদকীয়, উপসম্পাদীয়, ড. মইনুল ইসলামের কলাম, অজয় দাশগুপ্তের ‘দূরের দূরবিনে’, মেজর মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলামের (অবঃ) ‘সমকালের দর্পণ’, হল্যান্ড থেকে বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, ড. আনোয়ারা আলম, অধ্যাপক বাসুদেব খাস্তগীর, নেছার আহমদ, রেজাউল করিম স্বপন, ছন্দা চক্রবর্ত্তী, এবং নাসের রহমানের কলামগুলো। ৬৬ বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে আজাদী পত্রিকার মাননীয় সম্পাদক এম. এ মালেক, পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেকসহ সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের জানাই অভিনন্দন ও প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। জনপ্রিয়তার শীর্ষে পত্রিকাটি আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবে – এই প্রত্যাশা করছি। জয়তু ‘দৈনিক আজাদী’।
        











