আজাদীর আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা

ডা. দুলাল দাশ | সোমবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ

সংগ্রামী জীবনবয়েস অনেক হলো। সেই ১৯৭১ সনের মহান মুক্তিযুদ্ধে সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে পাঞ্জাবীর হাত থেকে বেঁচে গিয়ে আজও বেঁচে আছি। ১৯৭১ সাল ১৬ ডিসেম্বর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ ও লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হলো। আমরা পেলাম স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ঠিক পর দিন ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত প্রথম সংবাদ পত্র ‘দৈনিক আজাদী’ আত্মপ্রকাশ করলো। আমি ১৯৬৯ সালে জানুয়ারি থেকে নোয়াপাড়া পথের হাটে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত। স্বাধীন হওয়ার পর পরই চট্টগ্রাম শহরে বাসাভাড়া নিই। ১৯৭২ সালের ২৫ মার্চ থেকে আমি আজাদী পত্রিকার নিয়মিত পাঠক হই যা অদ্যবধি চলমান এবং যতদিন বেঁচে থাকবো ও চোখে দেখবো আজাদী থাকবে আমার সাথে। সকালে হকার যখন আজাদী দিয়ে যায় তখন দরজায় একটা শব্দ হয়। আমি বিছানা থেকে বুঝতে পারি আজাদী এসে গেছে। আমি এটার এত নিয়মিত পাঠক যে করোনা মহামারীর লক ডাউনেও আজাদী আমি বন্ধ করিনি। তখন বা এখনও দেশে বিদেশে অনেকে অনলাইনে আজাদী পড়ে। ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ দৈনিক আজাদী ৬৬ বছরে পা রাখল। দীর্ঘ ৫৩ বছর আমি আজাদীর নিয়মিত গ্রাহক। চট্টগ্রামবাসীর হৃদয়ের পত্রিকা মনের পত্রিকা আজাদী। ১৯৬০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আজাদী প্রথম প্রকাশিত হয়। পরম শ্রদ্ধেয় মরহুম ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক এই পত্রিকার জন্মদাতা। অনেক প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতার মুখে এর জন্ম। মানব মুক্তি, সামাজিক অগ্রগতি, বিশ্বে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, দেশের ও বিদেশের দৈনন্দিন ঘটনাবলি। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অপবাদ, দুর্নীতি, সাধারণ মানুষের অভাবঅভিযোগ, চট্টগ্রামবাসীর দুঃখ দুর্দশা, দাবিদাওয়া, সামাজিক অস্থিরতা, ব্যবসা, বাণিজ্য, রাজনৈতিক অঙ্গনের খবরাখবর, খেলাধুলা, শিল্পসাহিত্য, সমালোচকদের কথা, সাহিত্যিক, প্রবন্ধকার, লেখক, কবি, ছোটদের জন্য লেখা, নতুন নতুন লেখকদের রচনাবলি আজাদী প্রকাশনায় স্থান পায়। আজাদী মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, চেতনার বাতিঘর, তাই এর জনপ্রিয়তা এত বেশি। মোট কথা আজাদী চট্টগ্রামের দর্পণ। অনন্তকাল এটা সুগন্ধি ছড়িয়ে যাবে। পাকিস্তানী শাসনামলে তৎকালীন একমাত্র মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ভীষণ প্রতিকূল পরিবেশে অসীম সাহসিকতার সাথে পত্রিকাটি ছাপিয়েছিলেন। মরহুম মাহবুল আলম চৌধুরীর অমর কবিতা, কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি’ অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে ছাপানো হয়েছিল। ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের মৃত্যুর পর সম্পাদকের দায়িত্ব পান পরম শ্রদ্ধেয়, পার্লামেন্ট সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। এরপর আরও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রচিত হলো। অধ্যাপক মো. খালেদের মৃত্যুর পর সম্পাদকের দায়িত্বে এলেন চট্টলার নক্ষত্র, নয়নমণি, আলোক বর্তিকা, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ২০২২ সালে ২১ শে পদক প্রাপ্ত জনাব এম এ মালেক। তাঁর একটা নীতি হলো কোনো কিছুতে সফলতা পেতে হলে লেগে থাকবে হবে। তাঁর দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা ও সাহসিকতা প্রমাণ করে আজাদীর আকাশ চুম্বি জনপ্রিয়তা ও সফলতা। মালেক সাহেব সম্বন্ধে বলতে গেলে উনার গুণাবলি শেষ করা যাবে না। এই চরম দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যতায়, বিশ্বস্ততায়, ব্যক্তিত্বে তিনি চট্টগ্রামের অনেক প্রতিষ্ঠানের ও সংগঠনের কর্ণধার। তাঁর তত্ত্বাবধানে অনেক বড় বড় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন চট্টগ্রামবাসীর জন্য এই আজাদী, ‘বিনিময়ে আমি দিয়েছি আমার জীবন, যৌবন’। প্রতিদানে আমি পাচ্ছি চট্টগ্রামবাসীর অফুরন্ত ভালোবাসা। সুদীর্ঘকাল আজাদীর আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তার পেছনে যে দু’জন প্রবাদপ্রতিম পুরুষের বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে তারা হলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ, অন্যজন বর্তমান সম্পাদক চট্টলার প্রাণ পুরুষ এম এ মালেক। আজাদী আজ চট্টগ্রাম ছাপিয়ে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার তালিকায়। এমনি একটি পত্রিকার পাঠক হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি।

লেখক: প্রাক্তন চিফ অ্যানাসথিওলজিস্ট, বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিরায় শিরায় আজাদী : রাঙা শৈশব
পরবর্তী নিবন্ধরসূলেপাক (দ.) সৃষ্টির মূল এবং আল্লাহর প্রেরিত নূর