আচমকা ধর্মঘট, স্থবির নৌ পরিবহন সেক্টর

বহির্নোঙরে পণ্য ওঠানামা বন্ধ কর্ণফুলীর ঘাটগুলোতে কাজ চলছে না বন্ধ রয়েছে যাত্রী পরিবহন

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:১৪ পূর্বাহ্ণ

নৌযান শ্রমিকদের আচমকা ধর্মঘটে স্থবির হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরসহ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সেক্টর। কর্ণফুলী নদীর ঘাটগুলোতে সব ধরনের পণ্য ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। একই সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাত্রী পরিবহনও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দশ দফা দাবিতে শনিবার মধ্যরাত থেকে নৌযান শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করলে বন্দরে লাইটারেজ জাহাজে লোড-আনলোডসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
জানা যায়, শুরুতে সব জাহাজ এই কর্মসূচিতে যোগ না দিলেও গতকাল সকাল থেকে মূলত সব লাইটারেজ শ্রমিক কাজ বন্ধ করে আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। ফলে বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ মাদার ভ্যাসেল
থেকে পণ্য খালাসে নিয়োজিত লাইটার জাহাজ, অয়েল ট্যাংকারসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব মো. নূর ইসলাম জানান, যতদিন ১০ দফা দাবি না মানবে ততদিন শ্রমিকদের আন্দোলন চলবে।
নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রামের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলামও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা বেতন, কর্মরত অবস্থায় নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান, ভারতীয় লাইনে প্রটোকলে ল্যান্ডিং পাস ইস্যুসহ ১০ দফা দাবিতে কর্মবিরতি চলছে।
লাইটার জাহাজ, ট্যাংকার, যাত্রীবাহী লঞ্চ এ কর্মবিরতির আওতায় রয়েছে বলে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জানান।
লাইটার জাহাজ মালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা গেছে, কর্মবিরতির কারণে লাইটার জাহাজ গতকাল থেকে বহির্নোঙরে যেতে পারেনি।
শ্রমিকদের ১০ দাবি হলো, নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক দেয়াসহ সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, খাদ্যভাতা ও সমুদ্রভাতার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করা, দুর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা।
এছাড়া রয়েছে চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহে দেশের স্বার্থবিরোধী প্রকল্প বাস্তবায়নে চলমান কার্যক্রম বন্ধ করা, বালুবাহী বাল্কহেড ও ড্রেজারের রাত্রিকালীন চলাচলের ওপর ঢালাও নিষেধাজ্ঞা শিথিল, নৌ-পথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ করা। ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস দেয়াসহ ভারতীয় সীমানায় হয়রানি বন্ধ করা, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করে সব লাইটার জাহাজকে সিরিয়াল মোতাবেক চলাচলে বাধ্য করা, চরপাড়াঘাটে ইজারা বাতিল ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বন্ধ করা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে ধর্মঘট চলবে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
গত রাতে একাধিক শ্রমিক নেতা আজাদীকে জানান, একদিন গত হলেও আমাদের সাথে কোনো ধরনের আলোচনা করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে আলোচনা এবং সুনির্দিষ্টভাবে দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক আজাদীকে বলেন, ধর্মঘটে বন্দরের খোলা পণ্যবাহী জাহাজের কার্যক্রমে প্রভাব পড়ছে। তবে কন্টেনার জাহাজ বা কন্টেনার হ্যান্ডলিং এবং ডেলিভারিতে কোনো সমস্যা নেই। আউটার অ্যাংকরেজ (বহির্নোঙর) থেকে পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে, যা বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।
প্রসঙ্গত, ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান ও পতেঙ্গা থানার ওসিকে প্রত্যাহারসহ ৫ দফা দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনে নেমেছিল লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন। তখনো একদিনের বেশি সময় বন্দরের খোলা পণ্যবাহী জাহাজের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভবিষ্যতের বিপদ এড়াতে আগেভাগে সতর্ক হতে বললেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধনাইক্ষ্যংছড়িতে কিশোরীর আত্মহত্যা