নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ভোগান্তি অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে। এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে এক ঘণ্টা। অনেকের বিকল্প পথ ব্যবহারে আশেপাশের সব রাস্তা এবং অলিগলিতেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি যানজট লেগে থাকছে আগ্রাবাদসহ সন্নিহিত এলাকায়। শুধু যানজট নয়, পুরো এলাকা মরুভূমির মতো ধুলোবালিতে একাকার হয়ে ওঠে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজ নাগরিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠেছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের পক্ষ থেকে পুলিশকে কথা দিয়েও কথা রাখা হয়নি। আগে বলা হয়েছিল ‘বৃষ্টির জন্য কাজ করা যাচ্ছে না’। এখন বলা হচ্ছে ‘বিপিসি থেকে বিটুমিন না পাওয়ায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না’। অজুহাতের গ্যাঁড়াকলে পড়ে শহরের প্রধান সড়কে চার লেনে গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করার অঙ্গীকার মাঠে মারা পড়ছে।
কবে নাগাদ নাগরিক এই দুর্ভোগের অবসান ঘটবে তা অনিশ্চিত।
নাগরিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এবং যান চলাচলে গতি আনতে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সন্নিকটস্থ টানেল রোড পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০ থেকে ২৫ মিনিটে এয়ারপোর্ট কিংবা পতেঙ্গা শিল্পাঞ্চলে যাতায়াতের লক্ষ্য নিয়ে নির্মিত হচ্ছে এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে। পাঁচটি পৃথক ভাগে বিভক্ত করে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার এঙপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। বর্তমানে বারিক বিল্ডিং থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত অংশের কাজ চলছে। বারিক বিল্ডিং থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত অংশে পিলার তৈরির বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। লালখান বাজার এলাকায় চলছে পাইলিংয়ের কাজ।
বারিক বিল্ডিং থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত শহরের অন্যতম ব্যস্ত এই অংশটিতে কাজ করার সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু শর্ত দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের জন্য সড়কের মাঝখানে যে পরিমাণ এলাকা ঘেরা হবে তার দুই পাশে বিশ ফুট করে দুই লেনে গাড়ি চলাচলের রাস্তা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশের এই শর্ত মেনে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাঙ রেনকিং জেবি লিমিটেড ঘেরা দেয়া অংশের দুই পাশে চার লেনের গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করার কথা। এলাকায় কাজ শুরু করার পর রাস্তাটি সম্প্রসারিত করা হয়। ঘেরা দেয়া অংশের দুই পাশে দুই লেন করে চার লেনে গাড়ি চলাচলের জায়গা করা হয়। ইতোমধ্যে বারিক বিল্ডিং থেকে চৌমুহনী পর্যন্ত এলাকায় পিলার নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। খুলে ফেলা হয়েছে ঘেরা। রাস্তা এখন শুধু বিশ ফুট নয়, পিলারের এক পাশেই ত্রিশ থেকে চল্লিশ ফুট পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু চওড়া এই রাস্তায় যান চলাচলের মতো অবস্থা নেই। রাস্তার কার্পেটিং না থাকায় পুরো সড়কই মাঠের আদল নিয়েছে। এবড়ো থেবড়ো এবং খানাখন্দে ভরা পুরো রাস্তা। ধুলোবালিতে একাকার পুরো এলাকা।
রাস্তাটি ঠিক রাখার দায়িত্ব ম্যাঙ রেনকিংয়ের হলেও তারা এই ব্যাপারে উদাসীনতা দেখাচ্ছে। মাসের পর মাস শহরের প্রধান এই রাস্তাটি নষ্ট থাকলেও তা নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা দেখা যায়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে। শেখ মুজিব রোডের আগ্রাবাদ অংশ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে ওঠায় প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি চৌমুহনী হয়ে বেপারিপাড়া দিয়ে আগ্রাবাদ এঙেস রোড, চৌমুহনী-কদমতলী সড়ক, মোগলটুলী-কমার্স কলেজ রোডসহ বিভিন্ন অলিগলি ধরে চলাচল করছে। এতে করে শুধু আগ্রাবাদ রোড নয়, আশেপাশের অলিগলি দিনভর যান চলাচল মুখ থুবড়ে পড়ে।
বিষয়টি নগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি করছে বলে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা আজাদীকে জানান। তিনি বলেন, ম্যাঙকে আমরা দফায় দফায় তাগাদা দিয়েছি। সিডিএকেও বলছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। রাস্তাটি যান চলাচলের পুরোপুরি অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। শুধু যান চলাচলে সংকট নয়, এত বেশি ধুলোবালি হচ্ছে যে, মানুষের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ম্যাঙ রেনকিন জেভি লিমিটেডের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পুরো দায় দেন বিপিসির ওপর। তিনি বলেন, বিপিসিকে দফায় দফায় পত্র দিয়েও আমরা এই রাস্তাটির কাজ করার জন্য বিটুমিন পাচ্ছি না। শুধুমাত্র বিটুমিনের অভাবে কাজ করতে পারছি না। বিটুমিন পেলে আজই কাজ শুরু করতে পারি। সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। বিকল্প উৎস থেকে বিটুমিন নেয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অন্য কোনো সোর্স থেকে নেয়া বিটুমিন দিয়ে কাজ অ্যালাউ করবে না। কিন্তু বিপিসি বিভিন্ন নালা নর্দমা করার জন্য বিটুমিন সরবরাহ দিলেও প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত প্রকল্পের জন্য বিটুমিন দিচ্ছে না। বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, বিপিসি বিটুমিন রাখে না। আমাদের যা বিটুমিন হয় তা তিন কোম্পানিকে ভাগ করে দিই। তিনটি বিপণন কোম্পানিই বিটুমিন বরাদ্দ এবং সরবরাহ দেয়।











