নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় সড়কে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে মোটর সাইকেলের মহড়া নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে হাশেম খান (৩৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে সাত জন। তাদের মধ্যে দুইজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্ক সংলগ্ন ১০ তলা ভবনের সামনে প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২৪ জনকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে হাশেমকে ছুরিকাঘাতকারী তরুণ সোহাগও রয়েছে। নিহত হাশেম হালিশহর থানাধীন রঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা। তার বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। তিনি সাউন্ডবক্সের মেকানিক বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম জোন) এএমএম হুমায়ূন কবির আজাদীকে বলেন- রাস্তায় বাইক স্টান্টের আয়োজন করেছিলেন কিছু যুবক। পেছনে সাউন্ড বক্সে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে তারা জাম্বুরি মাঠের সামনে দিয়ে আসছিলেন। স্থানীয় যুবক মহসীন ও তার বন্ধু অপু বাজার করে রিকশা নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় সুমন নামে আয়োজকদের একজন তাদের ওই রাস্তা দিয়ে যেতে বাধা দেয়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মহসীনকে মারধর করা হয়। মহসীন স্থানীয় হওয়ায় তা দেখে কয়েকজন এগিয়ে আসে। আর তার ছোটভাই সোহাগ এসে ছুরিকাঘাত করে। ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে বলেন, স্টান্ট শো আয়োজকরা আগ্রাবাদ ইস্টার্ন বয়েজ ক্লাবের সদস্য। তাদের সদস্যরা বিভিন্নস্থানে বাই সাইকেল ও মোটর সাইকেল নিয়ে স্টান্ট শো করে। বুধবার হালিশহর এলাকায় তাদের ক্লাবের অন্য কিছু সদস্য ‘উদয়ন একতা সংঘ’ নামে আরেকটি ক্লাবের উদ্বোধন করে। সবাই একইধরনের টি শার্ট পড়ে সেখানে গিয়েছিল। তারা সংখ্যায় শ’ খানেক ছিল জানিয়ে ওসি বলেন, রঙ্গিপাড়া থেকে জাম্বুরি মাঠের দিকে মোটর সাইকেলের মহড়া দিয়ে তারা আসছিল। পিকআপ ভ্যানে উচ্চস্বরে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে তারা যাচ্ছিল। এসময় মহসীন নামে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে আয়োজকদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হলে মহসীনের ডাকে এলাকার লোকজন জড়ো হয়। পরে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
ওসি জানান, সংঘর্ষের মধ্যে বুকের বাম পাশে ছোরা অথবা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হাশেম আহত হন। তাকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া আরও দু’জন আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সংঘর্ষের পর পুলিশ উভয় পক্ষের ২৪ জনকে আটক করেছে বলে জানান ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন। আটককৃতদের মধ্যে হাশেমের ওপর হামলাকারী যুবকও আছে। যার নাম সোহাগ (২২)। সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামলার কথা স্বীকার করেছে। সোহাগ জানায়, বড় ভাইকে মারধর করতে দেখে সে পার্শ্ববর্তী টং দোকান থেকে ছুরি নিয়ে এলোপাথাড়ি হামলা চালায়। এতে শুরুতে দু’জনের ছুরির আঘাত লাগে। আরেকজনের পেটে ছুরিটি আটকে যাওয়ার পর সে পালিয়ে যায়।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম আজাদীকে জানান, হাশেমকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেই তিনি মারা যান। তবুও তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। দুপুর ২টার দিকে হাশেমের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ হয়ে মর্গে নেয়া হয়। আহত ফাহিম (২০) ও রবিউলকে (২২) চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ছাত্রলীগ মোটর সাইকেল র্যালি বের করলে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। আটককৃতরা সবাই ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। আবার হামলায় আহত এক যুবকের দাবি, হামলাকারীরা এলাকায় চিহ্নিত পুলিশের সোর্স হিসেবে। সোর্স মাসুদ, রনি ও ক্যাশিয়ার লিমনের নেতৃত্বে জাম্বুরি মাঠের আশপাশে মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে হকারদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকে তারা। হামলাকারীদের অনেককেই পুলিশের সাথে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেলেও তাদের কাউকে পুলিশ আটক করেনি। তবে এ দাবি হাস্যকর বলে জানিয়েছেন ওসি মহসীন।