দক্ষিণ চট্টগ্রামের আলোকিত পর্যটন স্পট বাঁশখালী ইকো পার্কে দীর্ঘসময় আশানুরূপ উন্নয়ন না হওয়াতে জৌলুস হারাতে বসেছে। দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু, আঁকাবাঁকা অসংখ্য নয়নাভিরাম লেক, পর্যটক টাওয়ারে ও সুউচ্চ পাহাড়ে উঠে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য দেখার সুযোগসহ নানাবিধ আয়োজনে ভরপুর এ ইকো পার্কটি। কিন্তু পার্কে প্রবেশের সড়কটির জীর্ণদশা, লেকে নানা ধরনের কচুরি ফানা, বসার স্থান, টয়লেটসহ নানা স্থানে সংস্কারহীন হওয়াতে অনেকটা পর্যটক বিমুখ হয়ে পড়ছে।
২০০৩ সালে থেকে বনবিভাগের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পর্যটন স্পট হিসেবে রূপ নিয়ে যাত্রা শুরু হলে সারাদেশ থেকে বিনোদন প্রেমী ও পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়। কিন্তু ২০০৮ সালের প্রলয়ংকরী বন্যার ফলে ইকোপার্কের অধিকাংশ স্থাপনা তছনছ হয়ে পড়ে। পার্কের অভ্যন্তরে হাইড্রোইলেকট্রনিক স্থাপনা থাকলেও সেটা তলিয়ে যায় বন্যার পানিতে। এ সময় ইকোপার্কের অভ্যন্তরে লেকের মাছ ইজারা দিয়ে অনেক রাজস্ব আয় হলেও বর্তমানে সেটা বন্ধ রয়েছে। তবে প্রতিবছর ইকোপার্কের প্রবেশ পথ গেইট ও পার্কিং এর স্থান সরকারিভাবে লিজ দিয়ে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা রাজস্ব পেলেও পার্কের উন্নয়ন ও আশানুরূপ পর্যটক এলে সেটা আরো বেশি হতো বলে অভিমত ব্যক্ত করেন সাধারণ দর্শনার্থীরা।
সুউচ্চ পাহাড়, মনজুড়ানো সবুজের ছায়াঘেরা গাছগাছালি, সন্ধ্যায় বন্যপ্রাণীর হাক–ডাক, বামের ও ডানের ছড়া লেকের স্বচ্ছ জলরাশি, সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ সব মিলিয়ে অপর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নয়নাভিরাম অভয়ারণ্য বাঁশখালী ইকোপার্ক। পূর্বের সে অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয় জনগণ। এক সময় পার্কের অভ্যন্তরে রক্ষিত নানা ধরনের খাঁচা ও ঝুড়িতে বেশ কিছু নানা ধরনের বন্য প্রাণী লালন পালন করা হলেও সেটা বর্তমানে নেই। তবে পার্কের অভ্যন্তরে পাহাড়ি এলাকায় নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এ পর্যটন স্পটের পানি বোরো মৌসুম সরবরাহ করার জন্য একটি সমবায় নিবন্ধনকৃত বামের ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় কমিটি থাকলেও তাদের উপার্জন না থাকায় তারা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তেমন ভূমিকা রাখতে পারে না। আশানুরূপ উন্নয়ন না থাকলেও বর্তমানে সরকারি দীর্ঘ ছুটির দিনে, সপ্তাহের শুক্রবারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণ করতে আসে ভ্রমণবিলাসই লোকজন। তবে এসে তারা পার্কের সৌন্দর্য বর্ধনের মতো কোনো কাজ দৃশ্যমান না দেখায় অনেক সময় হতাশ হয়, ফলে দিন দিন অনেকটা পর্যটকদের কাছে জৌলুস হারাচ্ছে বাঁশখালী ইকোপার্ক।
শীলকূপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কায়েশ সরওয়ার সুমন বলেন, দেশের আলোকিত ও আলোচিত এ পার্ককে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ও পর্যটক বান্ধক করতে মাননীয় সংসদ সদস্যসহ বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগসহ পার্কে আসার সড়কটি সংস্কারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এ সড়কটির সংস্থার কার্যক্রম বাস্তবায়নে টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন বলে সে জানায়।
বাঁশখালী ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইসরাঈল হক জানান, ইকোপার্কের সংস্কারের জন্য আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পার্ক সংস্কারের সুনির্দিষ্ট প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছে। আশা রাখি সে সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আবারো পর্যটনে মুখরিত হবে বাঁশখালী ইকোপার্ক। তিনি আরো বলেন, পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন নয়, কোনো স্থানে কি হবে সেটা যথাযথভাবে চিহ্নিত করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হবে। এবং সেটা অচিরেই হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।