কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতন আন্দোলনে সহিংসতার তদন্ত করতে জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশন বা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস। আর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, জাতিসংঘকে এ তদন্ত কাজে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে পৃথক ব্রিফিংয়ে আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন গোয়েন লুইস ও তৌহিদ হোসেন। খবর বিডিনিউজের।
গোয়েন লুইস বলেন, তদন্তের জন্য আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশে আসবে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। এই মিশন স্বাধীনভাবে কাজ করবে। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্তের অর্থায়ন করবে জাতিসংঘ। এ নিয়ে কর্মপ্রক্রিয়া ও পরিধি ঠিক করতে কাজ করছে জাতিসংঘ।
অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের আগের দিনের ফোনালাপের বরাত দিয়ে গোয়েন লুইস বলেন, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারও তদন্ত দলকে সহায়তা করবে। সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন আগস্টের শুরুতে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়। জেলায় জেলায় সহিংসতায় মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রায় তিনশ মানুষের প্রাণ যায়।
৫ আগস্ট আন্দোলনারীদের ঢাকামুখী লংমার্চের মধ্যে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর বিভিন্ন থানা, আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের বাড়ি, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই সময়ও তিন দিনে বহু মানুষের মৃত্যুর খবর আসে।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ বলেন, এই তদন্ত গ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য ও নিরপেক্ষ করার বিষয়ে যা যা করা দরকার সে বিষয়ে সরকার অবশ্যই সহযোগিতা করবে। আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব যেন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্ত হয়। যেটি সমস্ত পৃথিবীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এখন সিচুয়েশন এমন যে, কোনো কিছু করতে গেলেই এক ধরনের সমালোচনা আসতে পারে। কাজেই আমরা চাইব তদন্তটা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবেই হোক। এক্ষেত্রে তাদেরকে যা যা সহায়তা করা দরকার, আমর সেটি করব।
তিনি বলেন, মূল বিষয় হচ্ছে আমাদের সহযোগিতা করা। যাতে আমরা ইনভেস্টিগেশন ঠিকমত করতে পারি এবং যারা শাস্তি পাওয়ার কথা, তাদের যেন শাস্তির মুখোমুখি করা যায়। এই সরকারের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। যারা এই অপরাধগুলো করেছে, এবং যারা হুকুম দিয়েছে, তাদেরকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে এবং সে কাজে জাতিসংঘ আমাদের সহায়তা করুক, এ ব্যাপারে তো আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত আছেই।
জাতিসংঘকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, তারা স্বাধীনভাবেই তদন্ত করুক।তারা যদি এখানে তদন্ত করতে চান তাদের নিরাপত্তার বিষয়টাও আমাদের দেখতে হবে। তারা যতই স্বাধীনভাবে করুন না কেন, সেখানে আমাদের ইনভলভমেন্ট থাকতেই হবে। কারণ এই সরকারও চায়একটা স্বচ্ছ তদন্ত হোক এবং তার ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে শাস্তি দেওয়া হোক। কাউকে ঢালাওভাবে বা সামরিক ট্রায়ালের চিন্তা সরকারের নেই। আমরা পুরোপুরি আইন অনুযায়ী কাজটা করতে চাই।