চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেছেন, বে টার্মিনাল বাংলাদেশের জন্য গেম চেঞ্জার। এটা হয়ে গেলে আমাদের উন্নতি হবে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই বে টার্মিনাল নিয়ে আপনারা একটি সুখবর পাবেন। আমাদের এখান থেকে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই সেটা প্ল্যানিং কমিটিতে চলে গেছে। আমরা বে টার্মিনালের জন্য ৫০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করেছি। আরও ২০০ একর নেয়া হবে। আমাদের জায়গা বড় বিষয় ছিল। বে টার্মিনাল আমরা যত দ্রুত করতে পারব ততই আমাদের জন্য লাভ। গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, নতুনভাবে বে টার্মিনালের জন্য রেলওয়ে, সড়কপথ এবং নদী সংযোগের মতো মাল্টি–মডেল যোগাযোগ নির্মাণের প্রয়োজন নেই কারণ এগুলো ইতিমধ্যেই প্রচলিত রয়েছে। বে–টার্মিনাল বাস্তবায়িত হলে বড় জাহাজগুলোকে মিটমাট করতে সক্ষম হবে।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য লোড করার পর ৭২ ঘণ্টার বেশি বন্দর সীমায় অলস বসে থাকতে পারবে না লাইটার জাহাজ। রেলের ইঞ্জিনের সংকট রয়েছে। পণ্যবাহী গাড়ির স্থানীয় কর্মবিরতির কারণেও সমস্যা হয়েছে। পানগাঁওতে জাহাজের ভাড়া নির্ধারিত ছিল। আমরা মনে করি ভাড়া নির্ধারণ করবে বাজার। তাই আমরা ভাড়া উন্মুক্ত করে দিয়েছি। পৃথিবীর অনেক ভালো কোম্পানি পানগাঁও নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ব্যবসাবান্ধব, প্রতিযোগিতামূলক বন্দর করতে আমরা পিছ পা হচ্ছি না।
তিনি গণমাধ্যমে সঠিক সংবাদের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমরা মনে করি মিডিয়া বন্দরের একটি অঙ্গ। আপনাদের প্রতিটি রিপোর্ট আমি দেখি। কখনো কোনো তথ্য দরকার হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমাদের দুর্বলতা থাকা স্বাভাবিক। আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি। আমরা দেশের স্বার্থে যা করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। এর সুফল দেশবাসী পাবে। আমাকে নিয়ে রিপোর্ট করলে দেশের ভেতর থাকবে। কিন্তু বন্দরের নেতিবাচক খবর সারা বিশ্বে পৌঁছে যায়। বন্দরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বন্দর সীমায় ছোটখাটো চুরিও যাতে না হয় সেই উদ্যোগ নিয়েছি। গাড়ির চেসিসের সঙ্গে লুকিয়ে ঢুকেছিল, সেটিও ধরা পড়েছে। কোনো সুযোগ যাতে কেউ নিতে না পারে। সিকিউরিটি সিস্টেমে মাল্টিপল ম্যাজার নিয়েছি। কাস্টমসের সঙ্গে আমদানি ক্ষেত্রে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের বিপজ্জনক কার্গো অপসারণ করেছি। ১২০টি রেফার (শীততাপ নিয়ন্ত্রিত) কন্টেনার নয় মাস প্লাগ ছিল, সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। বিদেশি মেইন লাইন অপারেটর ধন্যবাদ জানিয়েছে। এ ধরনের কাজ গত ১০–১৫ বছরে হয়নি। সেটা ৩–৪ মাসে করতে পেরেছি। ১০ হাজার নিলামযোগ্য কন্টেনার পড়ে আছে। ইনভেন্ট্রি হচ্ছে। এ জায়গা খালি হলে ৪–৫ বছর চলবে। আমি আসার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, এনবিআর, কাস্টম সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়েছে। আমাকে ব্যক্তি হিসেবে না দেখে প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখবেন।
বন্দর চেয়ারম্যান আরো বলেন, বর্তমানে ১ হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার পর্যন্ত কন্টেনার বহনকারী জাহাজ বন্দরের বিদ্যমান জেটিতে বার্থ করতে পারে। চ্যানেলটি ড্রেজিং করার পর, যেখানে ১২ থেকে ১৪ মিটার ড্রাফট এবং ব্রেক ওয়াটার সুবিধা থাকবে। পাঁচ থেকে ছয় হাজার কন্টেনারের ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টা বে–টার্মিনালে নেভিগেট করতে পারে।
কর্ণফুলী নদীকে আবর্জনামুক্ত রাখতে চট্টগ্রাম বন্দর কী কী পরিকল্পনা করছে– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কিছু কিছু জায়গায় আমাদের অনেক আগে থেকেই পলিথিন ও পলি জমে। এগুলো আবার আসে খাল ও নালা দিয়ে। সেটার জন্য আমরা ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রজেক্ট নিয়েছি। এ প্রজেক্ট আমাদের মে বা জুন মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এটা হয়ে গেলে কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা ঠিক থাকবে। জোয়ার–ভাটায় পানি যে বাধাগ্রস্ত হয়, সেটা নির্বিঘ্নে যেতে পারবে। আমরা সিটি করপোরেশন, সিডিএ, জেলা প্রশাসন সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি, যাতে প্রত্যেকে যার যার দায়িত্ব পালন করে। এটা কমপ্লিট হয়ে গেলে আমার মনে এবার বর্ষার মৌসুমে জলাবদ্ধতা হবে না।
তিনি আরো বলেন, গত সরকারের আমলে বন্দর নানা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ছিল। সিন্ডিকেট ভাঙার উদ্যোগ নিয়েও আমরা সফল হয়েছি। যার ফলে বন্দরের খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। পাশাপাশি এই বন্দর কার্গো ও কন্টেনার হ্যান্ডেলিংয়ে রেকর্ড করেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় কন্টেনার হ্যান্ডেলিংয়ে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ে ৩ দশমিক ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এই পোর্টকে জনবান্ধব করার জন্য স্বচ্ছতা, ন্যায় ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বন্দরের বোর্ড সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) হাবিবুর রহমান, (অর্থ) শহীদুল আলম, (প্রকৌশল) কমডোর কাওসার রশিদ ও (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ।











