আগামী অক্টোবর মাসেই কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতু একনেকে অনুমোদন হবে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল বাকী। অনুমোদন হয়ে গেলে কিছু অফিসিয়াল কাজ সম্পন্ন করে সরকার টেন্ডার প্রক্রিয়াতে যাবে। এরপর সেতুর কাজ শুরু করতে হবে। প্রকল্প মেয়াদকাল ২০৩০ সালের জুন মাস পর্যন্ত বলে জানান রেল সচিব। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সংস্কারাধীন কালুরঘাট রেল সেতু পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জাবাবে রেলপথ সচিব এসব কথা বলেন।
কক্সবাজার রুটে ট্রেন বাড়ানোর ব্যাপারে রেল সচিবের দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের ইঞ্জিন সংকট আছে, ইঞ্জিন সংকট কাটিয়ে উঠলে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে এবং চট্টগ্রাম–দোহাজারী লোকাল ট্রেনও চালু হবে।
কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতুর কাজ শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কালুরঘাট রেলকাম সড়ক সেতুর বিষয়ে কোরিয়ার সাথে আমাদের নতুন চুক্তি হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এ সরকার আসার পরে একটি একনেক সভা হয়েছে। ওই সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হয়নি। আমরা আশা করি পরবর্তী একনেকে এটি অনুমোদন হবে। সেতুটি বাস্তবায়ন হয়ে গেলে বোয়ালখালী তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামের দুঃখ অনেকটা কেটে যাবে। শুধু বোয়ালখালীবাসী নয় এটির সেবা সারাদেশই পাবে এবং এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক একটি পরিবর্তন আসবে। অন্যান্য প্রকল্পগুলোর সময় বারবার বৃদ্ধি পেলেও জাপান–কোরিয়ার প্রকল্পগুলো সাধারণত তাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ করা হয়। আমরা আশা করি সে সময়ের মধ্যে (৫ বছর মেয়াদী) সেতুর কাজ শেষ করতে পারবো।
সংস্কারাধীন কালুরঘাট সেতু যান চলাচলের জন্য কখন স্বাভাবিক হবে জানতে চাইলে রেল সচিব বলেন, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের তত্ত্বাবধানে সেতুর সংস্কার কাজ চলছে। সংস্কার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। আগামী মঙ্গলবার বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা পরির্দশনে আসবেন। তাদের পরীক্ষা–নিরীক্ষা পর সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। ধারণা করছি আগামী এক মাসের ভিতর যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।
ঝূঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে রেল চলাচল নিরাপদ হবে কিনা জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল বাকী বলেন, বুয়েট দ্বারা পরীক্ষা করেই সেতুটি সংস্কার করা হয়েছে। রেল চলাচলে সেতুতে কোনো ঝুঁকি নেই। শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই সেতুটি রেলের উপযোগী করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম–দোহাজারী রুটে দীর্ঘদিন ধরে লোকাল রেল বন্ধের বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, ইঞ্জিনের অভাবে লোকাল ট্রেনটি আমরা বন্ধ রেখেছিলাম। ইঞ্জিনের ব্যবস্থা হয়ে গেলে পুনরায় রেলটি চালু করা হবে।
বোয়ালখালীতে দুটি রেল স্টেশন থাকার পরও কক্সবাজারগামী ট্রেন একটি স্টেশনেও না থামার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাত্র তো উন্নয়ন শুরু হয়েছে। আপনারা একটু ধৈর্য্য ধরেন এগুলো সব সমাধান হবে। আগামীতে যে কোনো একটি স্টেশনে রেল থামবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
এদিকে পরিদর্শন শেষে চলে যাওয়ার সময় কালুরঘাট সেতুর পশ্চিমাংশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তোপের মুখে পড়েন রেল সচিব আবদুল বাকী। সেতু সংস্কার করতে তিন মাসের কথা বলে ১ বছর ২ মাস সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখনো কাজ কেন শেষ হচ্ছে না ছাত্ররা জানতে চাইলে তিনি সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারেননি বলেন জানান ছাত্ররা। চট্টগ্রাম–দোহাজারী রেল চলাকালে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র–ছাত্রীদের জন্য যাওয়া আসা সহজ ছিল। রেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন। নতুন বাংলাদেশে চট্টগ্রাম–দোহাজারী রেল চালু করাসহ বিভিন্ন দাবির কথা জানান ছাত্ররা।
সেতু পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিমাদ্রি খীসা, বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. মিজান, মো. রাব্বি প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সিআরবিতে পূর্বাঞ্চলের প্রধানদের সাথে বৈঠক : সকাল সাড়ে ৯টায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল বাকী সিআরবিতে পূর্বাঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি রেলকে যাত্রীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা, যাত্রীদের সুযোগ–সুবিধা বাড়ানো, যাত্রী হয়রানি রোধে রেল কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্তরিকতার সাথে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেন। কোনো ধরনের অনিয়ম–অব্যবস্থাপনা সহ্য করা হবে না বলেও জানান রেল সচিব।
চট্টগ্রাম রেল স্টেশন পরির্দশন : কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সাথে মিটিং শেষে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল বাকী সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম রেল স্টেশন পরির্দশন করেন। এ সময় সচিব আবদুল বাকীর সাথে উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা, প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী তাপস কুমার দাস, চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান, সিওপিএস শহীদুল ইসলাম, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ–সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ইবনে সফি আব্দুল আহাদ, দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সবুক্তগীন, অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান, স্টেশন মাস্টার শফিকুল ইসলাম। চট্টগ্রাম স্টেশন পরির্দশনে গিয়ে রেল সচিব স্টেশনের ওয়েটিং রুম, যাত্রীদের টয়লেট, ভিআইপি রুম পরির্দশন করেন। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশনে এসে থামলে সচিব আবদুল বাকী ট্রেনের যাত্রীদের সাথে কথা বলেন। এসময় তাদের সুবিধা–অসুবিধার কথা জানতে চান।
রেল স্টেশনে কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে রেল সচিব টিকেট কালোবাজারি রোধসহ স্টেশন সবসময় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দেন।