আগামী বছর ডিসেম্বরের মধ্যে রেল যাবে কক্সবাজার

আইকনিক স্টেশন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে মন্ত্রী

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

আগামী বছর (২০২২ সাল) ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার রুটে রেল চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। গতকাল বৃহস্পতিবার দোহাজারি-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এই ঘোষণা দেন। ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঝিনুকের আদলে নির্মিত হচ্ছে এই আইকনিক ভবন। ছয়তলা বিশিষ্ট এই ভবনে রাখা হচ্ছে সব ধরনের সুবিধা।
মন্ত্রী বলেন, আগামী বছরেই মানুষ কক্সবাজারে ট্রেনে করে আসতে পারবে। সরকারের ১০ মেগা প্রকল্পের মধ্যে দুটি হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের। যার একটি হচ্ছে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প। প্রকল্পের পরিকল্পনা নিয়ে মন্ত্রী জানান, ভবিষ্যতে রেলপথটি কক্সবাজার থেকে রামু হয়ে ঘুনধুম পর্যন্ত নেওয়া হবে, যা চীন পর্যন্ত সমপ্রসারিত হবে। তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতিতে পর্যটন খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্পটি পরিকল্পনা মাফিক করা হচ্ছে। এই আইকনিক ভবনটিতে আন্তর্জাতিকমানের সব সুবিধা রাখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশি-বিদেশি প্রচুর পর্যটক আসবে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের সংসদ সদস্য জাফর আলম সাইমুম, সরওয়ার কমল, কানিজ ফাতেমা আহমেদ, নাদিরা ইয়াসমিন জলি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ, প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন। এসময় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েলসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আমাদের চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, রেলপথ নির্মাণে অধিগ্রহণকৃত ভূমির বিপরীতে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম হওয়ার বিষয়টি মন্ত্রীর নজরে আনেন কক্সবাজার-১ আসনের এমপি জাফর আলম ও কক্সবাজার-৩ আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল। অভিন্ন বক্তব্যে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দুই এমপি বলেন, ‘রেললাইন নির্মাণে কক্সবাজার জেলায় ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত জায়গার মালিকরা ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি বলে অহরহ অভিযোগ উঠে। তাই বিষয়টির প্রতি সুদৃষ্টি দিয়ে জমির মালিকরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, রামু, কক্সবাজার, উখিয়া এবং নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কি.মি. রেললাইন নির্মাণে প্রকল্প গৃহীত হয় ২০১১ সালে। কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ প্রথমে অর্থের সংস্থান ও পরে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্পটি শুরু করতেই অনেক দেরি হয়ে যায়। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের জন্য শেষ পর্যন্ত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে ১৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। প্রকল্পের আওতায় ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব না হলে প্রকল্প ব্যয় বাড়তে পারে। তবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য থাকলেও দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অংশ আগেই শেষ করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। প্রকল্পটি স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে উদ্বোধন করার আগ্রহ প্রধানমন্ত্রীর।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রেলের চুক্তি হয়। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজও দেরিতে শুরু হয়। এরপরও ২০২২ সালেই সারা দেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে কক্সবাজার যুক্ত হবে আশা সংশ্লিষ্টদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপিতা দাবি করা যুবকের মামলায় আদালতে হাজির হননি বদি
পরবর্তী নিবন্ধটিকা ছাড়ছে বেক্সিমকো, প্রতি ডোজ ১১২৫ টাকা