আগামী নির্বাচনে সরকারের গোপন কৌশল জেনে গেছেন ফখরুল?

সালাহ উদ্দিনকে ফেরাতে সরকারের উদ্যোগ দাবি

| শুক্রবার , ১০ মার্চ, ২০২৩ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিততে আওয়ামী লীগ কী কৌশল নিচ্ছে, সেটি গোপন সূত্র থেকে জেনে যাওয়ার কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ পুলিশকে দিয়ে করিয়েছিল বলে অভিযোগ তার। তিনি জেনেছেন, এবার আনসার ও গ্রাম পুলিশ বা ভিডিপি দিয়ে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার। সেই সঙ্গে কিনে নেয়া হবে নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সংস্থা ও কর্মকর্তাদের।

দেশের বিদ্যুৎ খাত নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক গোলটেবিল আলোচনায় কথা বলছিলেন ফখরুল। বিএনপিপন্থি প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব) এর উদ্যোগে আলোচনার বিষয় ছিল ‘মহাবিপর্যয়ে বিদ্যুৎ খাত : গভীর খাদে অর্থনীতি’। এদিকে বৃহস্পতিবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা থেকে খালাস পাওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের উদ্যোগ চেয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খবর বিডিনিউজের।

আদানির সাথে বিদ্যুৎ চুক্তিতে দেশের বিপুল পরিমাণ আর্থিক লোকসান হয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এটা কেন করছে সরকার? তারা করছে এ কারণে যে, টাকা দিয়ে ভবিষ্যতে আবার নির্বাচন কিনে নেবে। বিভিন্ন সংস্থাগুলো যারা নির্বাচন চালায়, তাদেরকে তারা পরিষ্কার ক্যাশ টাকা দিয়ে দেবে। মানতে চায় না নির্বাচন কমিশন। কিন্তু প্রিজাইডিং অফিসার থেকে শুরু করে ওই পর্যন্ত কিন্তু খাম চলে যায়। পুলিশের কাছে খাম যায়, বিজিবির কাছে খাম যায়, এমনকি স্ট্রাইকিং ফোর্স যারা থাকে, তাদের কাছেও খাম যায়। এটা সত্য, ঘটেছে ২০১৮ সালে। ফখরুল বলেন, এখন আবার নতুন কৌশল হয়েছে। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে খবরটবর শুনি। উনারা বলছেন যে, আগের মত তো পারা যাচ্ছে না পুলিশ দিয়ে, ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে। ‘নতুন কৌশল কী? আনসারভিডিপি দিয়ে করানো হবে।’

স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও নতুন প্রবণতা দেখার কথা জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো হয়ে গেছে, সেই নির্বাচনে হঠাৎ দেখা গেল গণনা করতে করতে একজন চেয়ারম্যান এগিয়ে আছেন। তারপর দেখা গেল আরেকজন এগিয়ে চলে গেলেন। যে ফলাফল লিখছে, ওইটা বদলে দিচ্ছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কুকে এই কৌশলে হারানোর অভিযোগ করেন ফখরুল।

নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, কোনো ওয়ারেন্ট নাই, গোলমাল নাইঘর থেকে বেরুলে আপনি ধরা পড়ছেন। বাসায় বসে কথা বললে ধরা পড়ছেন। আবার একটা আইন করার প্রস্তাব দিয়েছে, ‘ডেটা প্রটেকশন ল’। এই আইন হলে ‘আপনি শেষ’। এই অবস্থা থেকে ‘উত্তরণে’ আন্দোলনের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন ফখরুল। তিনি বলেন, এই সরকারকে বাধ্য করতে হবে পদত্যাগ করার জন্য। এছাড়া এই দেশ বাঁচবে না।

ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিকে দেশবিরোধী অভিহিত করে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব। তার মূল্যায়নে এটি ভয়ংকরভাবে অসম ও দুরভিসন্ধিমূলক চুক্তি। তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রশ্ন উঠেছে যে, কীভাবে তারা (সরকার) এরকম চুক্তি করতে পারে? আদানির সঙ্গে এই চুক্তি দেশবিরোধী, এই চুক্তি জনগণবিরোধী। আমি এই ফোরাম থেকে বলছি, এই চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎখাতে যে দায়মুক্তি আইন করা হয়েছে, সেই আইন বাতিল করতে হবে।

অ্যাবের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে যুগ্ম মহাসচিব কেএম আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় আলোচনায় সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব কাদের গনি চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান, শাম্মী আখতার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সালাহউদ্দিনকে ফেরাতে উদ্যোগ দাবি : ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা থেকে খালাস পাওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের উদ্যোগ চেয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তাকে বিনা কারণে অন্যায়ভাবে দীর্ঘ ৮ বছর ভারতের কারাগারে এবং নজরবন্দি অবস্থায় কাটাতে হয়েছে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বেকসুর খালাস দেওয়ার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকারের। আমরা বাংলাদেশ সরকারের নিকট আহ্বান জানাচ্ছি, সালাহউদ্দিন আহমেদকে মুক্ত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক।

ভারত সরকারকে উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদকে অবিলম্বে সসম্মানে বাংলাদেশে ফের পাঠানোর জন্য ভারত সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। আহ্বান জানাচ্ছি তার মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য ও সম্মানিত করার জন্য। মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন, নিপীড়ন, হামলামামলার অন্যতম শিকার সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও কেন্দ্রীয় সংসদের এককালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আইনজীবী ছিলেন, এক সময়ের বিচারক ছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব ছিলেন, এমপিমন্ত্রী ছিলেন। তার বর্ণাঢ্য জীবনে কোনো কালিমা লাগেনি। তার বেকসুর খালাসের রায়ের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, সালাহউদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশের এই অবৈধ সরকার চক্রান্ত করে সীমাহীন নির্যাতন ও হয়রানি করেছে। আমরা তাকে এখন নিঃশর্তভাবে মুক্ত অবস্থায় ফেরত চাই। বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ দলের নিখোঁজ নেতাকর্মীদের বিষয়ে ফখরুল বলেন, আমরা বহু সংবাদ সম্মেলন, বহু রাজনৈতিক কর্মসূচি, হরতালঅবরোধ কর্মসূচি পালন করেছি। এখনও প্রতিনিয়ত উদ্যোগ নিচ্ছি, বিশ্বজনমত তৈরি করেছি। মার্কিন রাষ্ট্রদূত গুম হওয়া পরিবারের বাসায় ভিজিট করেছেন। এই ধরনের কর্মকাণ্ড আমরা সবসময় চাচ্ছি। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, তাদেরকে ফিরে পাওয়ার জন্যএটা আমাদের বহাল আছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপির সালাহ উদ্দিন ও ড. ইউনূস বিষয়ে যা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধনকল গহনা বন্ধক দিতে গিয়ে ধরা পড়ল নারী