আগামী তিন মাস বিশেষ পরিচ্ছন্ন অভিযান চালাবে চসিক

করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৯ জুন, ২০২৫ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে আগামী তিন মাস বিশেষ সচেতনতামূলক ও পরিচ্ছন্ন অভিযান চালাবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এক্ষেত্রে সচেতনতার পাশাপাশি কীটনাশক প্রয়োগের মাত্রাও জোরদার করা হবে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োগ করা হবে বলে জানান তিনি।

গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) চত্বরে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ‘বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন মেয়র। এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দীন, চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি, উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা, ড্যাব চট্টগ্রাম জেলা শাখার সেক্রেটারি ডা. বেলায়েত হোসেন ঢালি ও ডা. সারোয়ার আলম।

ডা. শাহাদাত বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি রোগী থাকে। ডাবের খোসা ও মিনারেল ওয়াটারের বোতল এখানে বেশি পাওয়া যায়। তাই জনগণের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য এখান থেকে প্রোগ্রাম শুরু করেছি। মেয়র বলেন, কোাভিডের সংক্রমণ, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া; বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ একসাথে এই তিনটি ভাইরাল রোগ মোকাবেলা করা। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া সিজনাল হলেও সঠিক প্রস্তুতি ও গণসচেতনতা ছাড়া ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। জনগণকে সজাগ থেকে পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের কর্মীদের মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে এবং জনগণের সাথে মিলেমিশে কাজ করছি। তিনি বলেন, এই তিনটি সমস্যার প্রকোপ না কমা পর্যন্ত আমরা বিশেষ সচেতনতামূলক ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাবো। আমাদের লক্ষ্য আগামী তিনমাস জনগণকে সাথে নিয়ে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও করোনা প্রতিরোধ করা।

কীটনাশক কার্যকর না হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, একই ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে মশার মধ্যে রেজিস্টেন্স তৈরি হয়। এজন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণাভিত্তিক নতুন মশা নিধন সমাধান বায়োলজিকাল লার্ভিসাইড ‘বিটিআই’ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছি। ফলাফল ভালো পেয়েছি। যদিও দাম বেশি, তবু এই ওষুধ দিয়ে কম কনসেন্ট্রেশনে কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো কাউন্সিলর নেই। তবে তাতে কাজ থেমে থাকছে না। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও সুপারভাইজাররা ইতিমধ্যেই প্রতিটি ওয়ার্ডে কাজ করছেন। রাজনৈতিক নেতা, পেশাজীবী, মহল্লা সর্দার সবাইকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৯ জন রোগী ভর্তি আছেন। তবে সবাই সুস্থ আছেন এবং গুরুতর কোনো রোগী নেই।

জনসচেতনতার উপর জোর দিয়ে মেয়র বলেন, আপনারা জনসচেতনতা বৃদ্ধি করুন, আমিও চেষ্টা করছি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন জায়গায় নালা, ঝোঁপঝাড় পরিষ্কার রাখা, লিফলেট বিতরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। অন্যথায়, জনগণের আমরা কোন উপকারে আসতে পারব না। মশার প্রজনন রোধে, কোথাও ডাবের খোসা, বালতি, নির্মাণ সামগ্রী উন্মুক্ত রাখা যাবে না। এতে পানি জমে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। বাসায় টব, বালতিতে দুই তিন দিন পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। খোলা জায়গায় টব রেখে পানি জমা করা যাবে না। কারণ ওখানে পানি জমলেই মশার লার্ভা জন্মাবে।

তিনি বলেন, শুধু সিটি কর্পোরেশনের উপর দায় চাপিয়ে না দিয়ে প্রতিটি নাগরিককে নিজ নিজ জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে। ফুলের টব, ছাদ, বারান্দা যেখানেই পানি জমে তা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে, সন্ধ্যার পর ফুলহাতা জামাপ্যান্ট পরিধান জরুরি। নামাজের সময়ও যেন স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়, বিশেষ করে মসজিদের ভেতরও যেন ডেঙ্গু প্রতিরোধে সতর্কতা থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপিআর পদ্ধতিতে ঐকমত্য না হলে গণভোটের আয়োজন করতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত নারীর মৃত্যু