আগামীদের আসরের মিলনমেলায়

গোফরান উদ্দীন টিটু | রবিবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ২:২৮ অপরাহ্ণ

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী আমাদের প্রাণের পত্রিকা। দীর্ঘ ছেষট্টি বছর ধরে দৈনিক আজাদী অত্র অঞ্চলের লাখো মানুষের কণ্ঠস্বর। দেশের যে কোন সংবাদ দ্রুততম সময়ে, নির্ভুলভাবে পেতে দৈনিক আজাদীর বিকল্প নেই। আর চট্টগ্রামের ঘটনা হলে তো কথাই নেই। সবার উপরে, সর্বোচ্চ গুরুত্বে তা ছাপা হবেই। ‘আঁরার ইউনূস নোবেল পাইয়ে’এমন অসাধারণ হেডিংই বা কোথায় পাবেন আজাদী ছাড়া?

আজাদী চট্টগ্রামের নবীন লেখকদের সূতিকাগার বা আঁতুড় ঘর। জীবনের প্রথম লেখাটি অপটু কচিহাতে লিখে প্রেরণ করলেই যদি তা ছাপাও হয় তো কেল্লাফতে। আগামীতে যারা সারাদেশের সেরা লেখক হবেন তাদের জন্মদাতা দৈনিক আজাদীর আগামীদের আসর। সুদীর্ঘকাল ধরে অত্যন্ত সুসম্পাদনায় গুণী সম্পাদকদের তত্ত্বাবধানে এ আসর পরিচালিত হয়ে আসছে। এক সময় শিশুকিশোরদের পুরস্কৃতও করতো আজাদী। অনুষ্ঠানও হতো।

গত ৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীর ৬৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজাদী ভবনে আগামীদের আসরের সর্বস্তরের লেখকদের মিলনমেলায় সে স্মৃতিই উঠে এলো সাড়ম্বরে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শতাধিক লেখকের উপস্থিতিতে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সেদিন মুখরিত হলো আজাদী ভবন। নস্টালজিক স্মৃতিচারণে তারা সোনালি অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন সবাইকে। সম্পাদক এম এ মালেক তাঁর সারগর্ভ বক্তব্যে বাবা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের অসীম অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাসহ স্মরণ করেন। বাবা যেমন বিনামূল্যে আজাদী দিয়ে ভিক্ষুকদের স্বাবলম্বী করেছেন তেমনি তিনিও সযত্নে স্বজনদের ঘরে ঘরে আজাদী পৌঁছে দিয়েছেন। বর্তমানে পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেকও আধুনিক আজাদী প্রকাশে এবং তা লক্ষ পাঠকের হাতে পৌঁছাতে সদা তৎপর। আগামীদের আসরের শ্রদ্ধেয় বিভাগীয় সম্পাদক প্রদীপ দেওয়ানজীর কথাও না বললেই নয়। পূর্বসূরিদের ধারা অব্যাহত রেখে তিনিও সগৌরবে আসরটি পরিচালনা করে আসছেন।

দৈনিক আজাদীর সহযোগী সম্পাদক কবি রাশেদ রউফের সঞ্চালনায় দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টার আগামীদের আসরের এ মিলনমেলায় বক্তব্য রাখেন কবি কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, শিশুসাহিত্যিক রহীম শাহ, মেজর (অব) এমদাদুল ইসলাম, সনজীব বড়ুয়া, সৈয়দ খালেদুল আনোয়ার, দীপক বড়ুয়া, বিপুল বড়ুয়া, . মুন্সী আবু বকর, জামাল উদ্দিন বাবুল, উৎপলকান্তি বড়ুয়া, জসীম মেহবুব, এমরান চৌধুরী, কেশব জিপসী, নিশাত হাসিনা শিরীন, মিজানুর রহমান শামীম, রোকসানা বন্যা, আ ফ ম মোদাচ্ছের আলী, নাসের রহমান, তালুকদার হালিম, জিন্নাহ চৌধুরী, সোহেল আনোয়ার, শিবুকান্তি দাশ, রমজান মাহমুদ, পংকজ দেব অপু, শামীম ফাতেমা মুন্নী, ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, মৃণালিনী চক্রবর্তী, সাইফুদ্দিন আহমেদ সাকী, শৈবাল চৌধূরী, নাজিমুদ্দীন শ্যামল, ইকবাল হায়দার, মর্জিনা আখতার, প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আকতার, প্রফেসর মুজিব রাহমান, প্রফেসর আলেক্স আলীম, রাজীব বসাক প্রমুখ।

সেদিন আরো উপস্থিত ছিলেন নিখিল রঞ্জন দাশ, হাসান আকবর, দিবাকর ঘোষ, আজিজ রাহমান, আবুল কালাম বেলাল, ফারজানা রহমান শিমু, ইসমাইল জসীম, সুবর্ণা দাশ মুনমুন, আকাশ আহমেদ, ওবায়দুল সমীর, কানিজ ফাতিমা, সুমী সেনগুপ্তা, সৈয়দা সেলিমা আক্তার, রাদিয়া আফরীন নাশরাহ্‌ কামরুল ইসলাম দুলু, রুনা তাসমিনা, সোমা মুৎসুদ্দী, ইফতেখার মারুফ, অমিত বড়ুয়া, শামসুল আরেফীন, আরফি রায়হান, লিটন কুমার চৌধুরী, সেলিনা আকতার খানম, সরওয়ার কামাল পাশা, সোহেল মাহরুফ, রেজাউল করিম, আখতারুল ইসলাম, সনজিত দে, . সৌরভ শাখাওয়াত, . সবুজ বড়ুয়া শুভ, মো. রফিক, সরোজ আহমেদ, মিলন বনিক, সাঈদুল আরেফীন, আহসানুল কবির রিটন, শওকত আলী সুজন, নাটু বিকাশ বড়ুয়া, এম কামাল উদ্দীন, আশফাকুর রহমান বিপ্লব, সাহাবুদ্দীন হাসান বাবু, সজল বড়ুয়া, রুদ্র সুশান্ত, রফিক আনম প্রমুখ।

এ উপলক্ষে ছড়াশিল্পী উৎপল কান্তি বড়ুয়ার সম্পাদনায় ২৩ ছড়াকারের ছড়া নিয়ে একটি প্রিন্টেড দেয়ালিকা সবার উপস্থিতিতে সম্পাদক এম এ মালেককে উপহার দেয়া হয়। এতে ভালোবাসায় এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আগামীদের আসরের লেখকবৃন্দ।

আমি আগামীদের আসর জীবনে প্রথম দেখি ১৯৮৩ সালে পশ্চিম মাদার বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন তখন ৬ পৃষ্ঠার আজাদীর মাঝখানের পাতায় ১পৃষ্ঠায় ছাপা হতো আগামীদের আসর। নামটা দেখতে ঠিক রেলগাড়ির মতন। সেই সময় বাংলা ‘আমার বই’ ও ‘চয়নিকা’ ছাড়াও আগামীদের আসরেই নতুনদের ছড়া, কবিতা, গল্প পড়তাম। এসব পড়ে পড়েই আমার লেখালেখির শুরু। ১ টাকা মূল্যের বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মাসিক পত্রিকা ‘শিশু’ও জীবনে প্রথম পড়ি তখন। শিশুর ‘কচিহাতের কলম থেকে’ এবং আগামীদের আসর নিয়মিতপড়তাম আমি। লেখার চেষ্টাও করতাম। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালের ১০ অক্টোবর, আমার জন্মদিনে, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ৮ম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় আমার প্রথম ছড়া ‘ঘুড়ি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেই থেকে আজ অবধি দীর্ঘ প্রায় চার দশক পাঠক ও লেখক হিসেবে আজাদীর সঙ্গেই আছি। লেখকরা দাবি জানিয়েছেন আগামীদের আসর যেন পূর্ণ পৃষ্ঠা প্রকাশিত হয়। হাজার বছরের চট্টগ্রাম এর মত আগামীদের আসর নিয়েও যেন একটি পূর্ণাঙ্গ সংকলন প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নবীন লেখকদের পুরস্কৃত করারও দাবি জানান তারা। প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ আবদুল খালেক, সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের স্বপ্নের আজাদী আজ সুযোগ্য সম্পাদনায় ফুলে ফলে সুশোভি হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে যোগ্য উত্তরসূরিদের হাতে। আজাদী শতায়ু হোক। জয়তু আজাদী।

লেখক : কবি, শিশুসাহিত্যিক, কলেজ শিক্ষক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্মৃতির সিন্দুকে আগামীদের আসর
পরবর্তী নিবন্ধএই ঋণ শোধ হবার নয়