আজ ১৪ই নভেম্বর বিশ্ব ডায়বেটিস দিবস। বিশ্বের প্রায়-১৬০টিও বেশি দেশে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) এই দিবস উৎযাপন করে। শুধুমাত্র মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্যই এই দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৯১ সাল থেকে আইডিএফ ও হু ১৪-ই নভেম্বরকে বিশ্ব ডায়বেটিস দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। এই দিন বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বেনটিং জন্ম নিয়েছিলেন এবং তিনি বিজ্ঞানী চালর্স বেষ্টের সাথে একত্রে ইনসুলিন আবিষ্কার করেন।
বর্তমান সময়ে আমরা সবাই জেনে গেছি যে, যে কারও যেকোনো বয়সে, যেকোনো পেশায় ডায়াবেটিস হতে পারে অর্থাৎ জন্মের পর থেকে মৃত্যুও পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ও ডায়াবেটিস যে কারও হতে পারে। যার বংশে ডায়াবেটিস নেই, বয়সও কম দেখা গেলো ঐ মেয়েটির গর্ভাবস্থায় এক ধরনের ডায়বেটিস হয় যাকে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বলে। হয়ে গেলে সঠিক চিকিৎসা ডায়াবেটিস শিক্ষা খাদ্য ব্যবস্থা মানলে প্রসবের পরে ঐ ডায়াবেটিস ভালো হয়ে যায়।
তবে ডায়াবেটিস নিয়ে আতংকিত হবার কিছু নেই। কারণ এই রোগ নিয়ন্ত্রণ রেখে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকা সম্ভব। মোট জনগোষ্ঠির ৫৭.৫% জানেই না তাদের ডায়াবেটিস আছে। বাংলাদেশে মৃত্যুর সপ্তম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। ২০৪০ সালে ডায়াবেটিস মৃত্যুর ৫ম প্রধান কারণ হবে। এই ডায়াবেটিস রোগের প্রকোপ ভয়াবহ ভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
কেন বাড়ছে:- ১। সচেতনতার অভাব, ২। অস্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ, ৩। স্টেচ, ৪। ওজনাধিক্য, ৫। ধূমপান, মদ্যপান, তামাক, জর্দা ইত্যাদি, ৬। শারীরিক শ্রমের অভাব।
ডায়াবেটিস যাদের আছে তারা কি করলে সুস্থ থাকবেন?: প্রথমত দেহের ওজন বাঞ্ছিত ওজনে রাখুন। খাদ্যের ব্যাপারে সচেতন হোন। সুষম খাদ্য প্রতি বেলায় খেতে অভ্যস্ত হোন। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকবেন না। একবারে বেশি করে খাবার খাবেন না। জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন। সারা দিনের খাবারকে ৫ থেকে ৬ বেলা ভাগ করে খেতে হবে। দিনে ৩০ মিনিট সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটুন।
যে সব বিধি নিষেধ মানতে হবে:
চিনি, গুড়, মধু, এসব দিয়ে তৈরী করা খাবার বাদ দিতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে: মাসে একবার বা দুই মাসে একবার হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। ওষুধ/ ইনসুলিন যাই লাগে সেটা নিতে হবে। যদি নাও লাগে আপনার চিকিৎসকই বলে দিবেন আপাতত আপনার ওষুধ লাগবে না। অর্থাৎ চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারো কথায় ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকুন।
যদি ইনসুলিন প্রয়োজন হয় অবশ্যই ইনসুলিন দেয়ার নিয়ম-কানুন জেনে পুশ করতে হবে। ইনসুলিন কোন প্রক্রিয়ার সংরক্ষণ করতে হয় তা- জানতে হবে।
ভ্রান্ত ধারণা থেকে বিরত থাকুন:
চিকিৎসক/ পুষ্টিবিদ ছাড়া ঔষধ বা খাদ্যের ব্যাপারে অন্য কারও কথায় কান দেওয়ার দরকার নেই। নিচের ভুল তথ্যগুলো মানা যাবে না; আলু খাওয়া যাবে না। মাটির নিচের তরকারী খাওয়া যাবে না। আতপ চালের ভাত খাওয়া যাবে না। রোজা রাখা যাবে না। গর্ভধারণ করা যাবে না।
যারা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে চান প্রথমেই তারা দেহের ওজনের ব্যাপারে দৃষ্টি দিন। যদি কম থাকে বাড়িয়ে ফেলুন, ওবেসিটি থাকলে কমিয়ে আদর্শ ওজনে নিয়ে আসুন। স্ট্রেচ কমান। ৭-ঘণ্টা ঘুমানোর ব্যবস্থা করুন। সুষম খাদ্যে অর্থাৎ দিনে ৫ বেলা খাবার খেতে অভ্যস্ত হোন এবং হাঁটুন ।
একজন ডায়বেটিস রোগীর খ্যাদ্য ব্যবস্থা:
একজন ডায়বেটিক রোগী অবশ্যই ৫ বেলা খাবার খাবে। সকাল, দুপুর, রাত স্বাভাবিক সময়ের মতো এবং সকাল ১১.০০ টায় এবং বিকাল ৫ টার ভিতর হালকা নাস্তা খাবে।
সকালের নাস্তায় মোট ক্যালরী ২০%, দুপুর ৩৫%, রাতে ৩০%, বাকি ১৫% ২ থেকে ৩ টা নাস্তায় অর্থাৎ সকাল আর বিকালে ভাগ করে খেতে হবে।
মনে রাখতে হবে- সব ব্যক্তির খাদ্যের চাহিদা বা ক্যালরি এক নয়। ক্যালরির নির্ধারণে যে বিষয়গুলি খেয়াল করতে হবে। তা হলো: ব্যক্তির ওজন উচ্চতা বিএমআই শারীরিক পরিশ্রম, জীবন যাত্রার ধরন ইত্যাদি। উপরোক্ত বিষয়গুলো জেনে সঠিক নিয়ম মানলে যেমনটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। ঠিক তেমনি ডায়বেটিস প্রতিকারও সম্ভব ।
লেখক : ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ও কনসালটেন্ট, ল্যাব এইড হাসপাতাল লিমিটেড
এবং পার্ক ভিউ হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক লিমিটেড, চট্টগ্রাম।